পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৩ - -*... রূপে প্রতিভাত হয় না । যে সাধকের প্রাণ সেই স্নেহময়ী জননীকে না দেখিয়া আকুল হইয় উঠে ; যে সাধকের প্রাণ সেই প্রাণের প্রাণকে না দেখিয়া থাকিতে পারে না ; পরমেশ্বরের জন্য যাহার প্রাণের টান’ হইয়াছে, তাহারই নিকট সেই মঙ্গল-স্বরূপ পরমপুরুষ আপনার মঙ্গলমূৰ্ত্তি প্রকাশ করেন । যখন আমরা প্রাণের সহিত, হৃদয়ের সহিত বলিতে পারিব যে “ঐহিকের সুখ যত জানি তায়, কাজ নাই সে সুখে সে ধনে, হারায়ে জীবনশরণে জীবনে কি কাজ অামার,” তখনই, আমরা জানিবার পূর্বেট, তিনি আমাদের আত্মাতে আবিভূত হইয়া শূন্যকে পূর্ণ করিবেন । আহা তাহার কি করুণা ! আমরা প্রার্থনা করিবার পূর্ব হইতেই সেই দেবদেব আমাদের অভাব বুঝিয়। পৃথিবীকে ধনধান্তে পূর্ণ রাখিয়াছেন, নদী সমুদ্রকে অগাধ জলের আধার করিয়া দিয়াছেন, আমাদিগকে বায়ুর সাগরে বেষ্টিত রাখিয়াছেন। আবার যখন আমাদের আত্মাতে র্তাহীকে লাভ করিবার প্রকৃত অভাব উপস্থিত হইবে, তখন সেই ভক্তবৎসল পিতা কি দেখা না দিয়া থাকিতে পারিবেন ? আমাদের তর্কের কি প্রয়োজন ? একবার পরীক্ষা করিয়া দেখিলেই জানিতে পারি যে, তাহাকে হৃদয়ের সঙ্গে ডাকিলে তিনি স্বয়ং আপনাকে দিয়া ও শূন্য হৃদয় পূর্ণ করেন কি না। ব্রহ্মসাধন যদিও অত্যন্ত কঠিন, তথাপি আমাদিগের নিরাশ হইবার কিছুমাত্র কারণ নাই। আমাদিগকে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন পূর্বক ব্রহ্মসাধন করিতে হইবে। যখন অন্যান্য বিদ্যা শিক্ষা করিতে আমাদিগের কত পরিশ্রম, কত অধ্যবসায়, কত আত্মচেষ্টা আবশ্বক হয়, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা १० कन्न, • श्रान LB ∎ግ তখন যে বিদ্যা সকল বিদ্যার ভিত্তিভূমি, ‘ দে বিদ্যা সৰ্ব্ববিদ্যা-প্রতিষ্ঠা, সেই ব্রহ্মবিদ্যা অয়ন্ত করিতে আমাদিগের কত-ন৷ পরিশ্রম, কত-না অধ্যবসায় আবশ্যক। অমাদিগের চেষ্টা থাকিলে ঈশ্বরের করুণা আমাদিগের সহায় হইবে । আমরা যদি ধৰ্ম্মপথে থাকিতে প্রাণপণ পরিশ্রম করি, তবে ধৰ্ম্মই আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যাইবেন । আমরা যদি ঈশ্বরের পথে আত্মচেষ্টায় একপদ ও অগ্রসর হই, তবে তিনি স্বয়ং আমাদিগের হস্তধারণ করিয়৷ সহস্রপদ অগ্রসর করিয়া দিবেন। র্তাহার এমনই করুণা , আমাদিগের উন্নতির জন্য তিনি এমনই সচেষ্ট । আমাদিগের এই ব্রহ্মোৎসব তাহার করুণার বিশেষ সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে । পূর্বেই বলিয়াছি যে, এমনও সময় গিয়াছে, যখন ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করিলে জাতিনষ্ট হইবার বিলক্ষণ ভয় ছিল— সময়ে সময়ে বিরোধী পক্ষের হস্তে প্রাণনাশের পর্য্যন্ত ভয় হইত। রামমোহন রায় তখন পণ্ডিতদিগকে ব্রহ্মবিদ্যা কেবলমাত্র শ্রবণ করাইবার উদ্দেশে, ব্রাহ্মসমাজে উপস্থিত থাকিলেই তাহাদিগকে উপযুক্তরূপে অর্থদান করিয়া সন্তুষ্ট করিতেন । কিন্তু আজ আর এক কাল আসিয়াছে। আর সেই সঙ্কোচ ভাব নাই । এখন সকলেই ব্রহ্মোৎসবে যোগদান করিবার জন্য আকুল। ইহাতে সেই দেবাধিদেবেরই মহিমা, তাহারই করুণ প্রকাশ পাইতেছে। র্তাহার এই করুণার উপরে নির্ভর করিয়াই আমরা মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করিতেছি যে, ব্রাহ্মধৰ্ম্মের জয় হইবেই হইবে। আমাদের সমকালেই হউক, কি পরেই হউক, ইহার জয় হইবেই— ইহার অগ্নিস্রোতকে কেহই বন্ধ করিতে