পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র ১৮১৩ বোয়ালিয়া ব্রাহ্মসমাজ ૨૭ જે এবং তাহাই অনুষ্ঠানে পরিণত করিব, ইহাই ব্রাহ্মধৰ্ম্মের তা দেশ । আমি যদি জানি ব্রহ্মোপাসনাই শ্রেষ্ঠ ; দয়াময় পরমেশ্বর ব্যতীত আমার আর মুক্তি নাই, ইহা যদি প্রকৃতই আমার হৃদয়ঙ্গম হয়, তাহা হইলে অপরকে কি ব্রহ্মোপাসনার বিরুদ্ধে উপদেশ দিতে পারি, না, আপনারই গৃহ্য সামাজিক অনুষ্ঠান সমূহে ব্রহ্ম ভিন্ন অন্য কোন কাল্পনিক দেবতাকে পূজা করিতে পারি ? অাজ কাল হিন্দু কৃতবিদ্য সম্প্রদায়ের প্রায় সকলেই বুঝিয়াছেন যে ব্রহ্মোপাসনাই একমাত্র মুক্তির উপায় ; কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই যে, তাহারা বহুদিন হইতে প্রচলিত প্রথার বশবৰ্ত্তী হইয়া ব্রাহ্মধন্মের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হয়েন । র্তাহারা এই আপত্তি উথাপন করেন যে, মূৰ্ত্তিপূজা দুর্বল অধিকারীদিগের নিমিত্ত ; তাহারা দুর্বল অধিকারী অতএব তাহারা মূৰ্ত্তিপূজাই করিতে থাকিবেন । র্তাহাদিগকে আমি এই বলিতে চাহি যে, যখন র্তাহারা এরূপ তর্ক করিতে সমর্থ হইয়াছেন, তখন ব্রহ্মকে অন্ততঃ কিঞ্চিৎ পরিমাণেও জানিয়াছেন । অবশ্য, ব্রহ্মকে কেহই সম্পূর্ণরূপে জানিতে পারে নাই এবং পরিবে ও না । কিন্তু ঈশ্বর অামাদিগের আত্মার অন্তরে র্তাহাকে জানিবার এক শক্তি দিয়াছেন, তাহা দ্বারাই আমরা তাহাকে জানিতে পারি ; এবং সেই শক্তি যতই পবিত্রত, আত্মচিন্তা প্রভৃতি দ্বারা পরিপুষ্ট করিব, ততই তাহাকে আত্মাতে অধিকতর অনুভব করিতে সমর্থ হইব । এই সকল জানিয়াও যদি তাহারা নিতান্তই আপনাদিগকে দুর্বল অধিকারী অতএব মুক্তিপূজারই উপযুক্ত বলিয়া নির্দেশ করেন, তাহা হইলে আমাদের বলিবার অধিক কিছু থাকে না ; এই মাত্র বলিতে পারি যে, তাহারা ব্রহ্মচিন্তা করেন না বা করিতে চাহেন না। ব্রহ্মজ্ঞানের প্রথম প্রচারস্থান এই ভারতের অধিবাসীর পক্ষে ইহা অত্যন্ত লজ্জার কথা । সত্যধৰ্ম্ম গ্রহণ বিষয়ে এইরূপ ঔদাসীন্য প্রকাশ করিবার ফলও ফলিতে আরম্ভ হইয়াছে । এমন ও শুনিয়াছি যে, যেখানে সাধারণ লোকের প্রশংসাভাজন হইতে পারা যাইবে, এমন স্থানে কোনও কৃতবিদ্য ব্যক্তি বলিলেন—হিন্দুধৰ্ম্মের মূর্তিপূজাই শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্ম ; আবার সেই তিনি, আপনার কতিপয় কৃতবিদ্য বন্ধুবর্গের মধ্যে, যেখানে নাস্তিকতা সমর্থন করিলে জ্ঞানবীরের সম্মান পাওয়া যাইবে, সেইখানে বলিলেন—ধৰ্ম্মই যখন নাই, তখন হিন্দুধৰ্ম্ম কোথায় ? আমাদিগের মধ্যে ধৰ্ম্মের বন্ধন কিরূপ শিথিল হইয়া যাইতেছে এবং তাহার সঙ্গে আমরাও কিরূপ অবনতির স্রোতে ভাসিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছি, তাহ। এই দৃষ্টান্তে কেমন প্রকাশ পাইতেছে । দ্বিতীয়তঃ, কৃতবিদ্য সম্প্রদায় আজকাল প্রত্যক্ষভাবে মূৰ্ত্তিপূজা সমর্থন করিতে না পারিয়া আধ্যাত্মিক পৌত্তলিকতার আশ্রয় গ্রহণ করেন । র্তাহার বলেন যে, ব্রহ্ম সর্বময় অতএব মুক্তিপূজা করিলেও ব্রহ্মপূজাই হয়। ইহা কদাপি যুক্তিসঙ্গত নহে । ব্রহ্মকে সর্বময় বিশ্বাস করিলে তাহারা বিশেষ বিশেষ মূৰ্ত্তির পূজা করেন কেন ? বিশেষ মূৰ্ত্তিতে ঈশ্বরের আবির্ভাব অধিকতর হইতে পারে না, কারণ তাহা হুইলে অনন্ত পরমেশ্বর সীমাবদ্ধ হইয়া পড়েন । ব্রহ্ম সর্বময় অর্থে এই যে, ব্রহ্মের সত্তাকে আশ্রয় করিয়াই সকলের সত্তা |