পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अंग* 3v३७ করণ স্বতন্ত্র ;–পরমাত্মার নিগুঢ় তত্ত্ব সকলই আত্মার অন্ন এবং তাহার মৃত-সঞ্জীবনী প্রেম-সুধাই আত্মার পানীয় । ভোগ-লালসা একরূপ ক্ষুধা, প্রেমপূহ আর-একরূপ ক্ষুধা ; ভোগ-লালসা উদরের ক্ষুধা, প্রেমস্পৃহা হৃদয়ের ক্ষুধা। অন্ন-পানে যেমন উদর পরিতৃপ্ত হয়, স্ত্রী পুত্রাদির মুখ দর্শনে তেমনি চক্ষু পরিতৃপ্ত হয়, তাহাদের কথা-শ্রবণে কৰ্ণ পরিতৃপ্ত হয়, তাহীদের মঙ্গল দর্শনে এবং মঙ্গল শ্রবণে মন পরিতৃপ্ত হয় ;–এ সমস্তই সত্য—-কিন্তু জিজ্ঞাসা করি—আত্মার সহিত তাহার কি সম্পর্ক ? গৃহস্থ ব্যক্তি স্ত্রীপুত্র বন্ধুবান্ধবে পরিবেষ্টিত থাকিলে তাহার মন ঠাণ্ড থাকে ; মন ঠাণ্ডা থাকিলে ঈশ্বরেতে মনঃ সমাধান তাহার পক্ষে সহজসাধ্য হয় ; আর, সেই সঙ্গে ঈশ্বরের প্রিয় কার্য্য সাধনে তাহার প্রবৃত্তি এবং সামর্থ্য জন্মে। আtত্বার সহিত সংসারের দ্বিতীয় সম্পর্ক এই যে, গৃহ এবং পার্শ্ববৰ্ত্তী সমাজ ঈশ্বরের প্রিয় কাৰ্য্য সাধনের নির্দিষ্ট ক্ষেত্ৰ;—ন্যায়ার্জিত বিত্ত দ্বারা যথাক্রমে এবং যথা নিয়মে পরিবার প্রতিপালন, বন্ধু বান্ধবের উপকার সাধন এবং জন সমাজের হিতসাধন— ইহারই নাম সংসার-ধৰ্ম্ম ; আর, গৃহ এবং সমাজ এই সংসার-ধৰ্ম্মের সাধন-ক্ষেত্র । আত্মার সহিত সংসারের তৃতীয় সম্পর্ক এই যে, সংসার-প্রীতি যদিচ বিপথগামী হইলে তাহা ঈশ্বর-প্রীতির ব্যাঘাত জন্মায় কিন্তু স্থপথে থাকিলে তাহা ঈশ্বর-প্রীতির তেমনি পোষকতা করে। সংসার দুইরাপ— ঈশ্বরের আবরণ এবং ঈশ্বরের প্রতিকৃতি ; পাপ-সংসার ঈশ্বরের আবরণ, পুণ্য-সংসার ঈশ্বরের প্রতিকৃতি। সংসার প্রীতিও দুই আত্মার ! সহিত সংসারের প্রথম সম্পর্ক এই যে, ঈশ্বরের উপাসন \లిన) রূপ—ঈশ্বরকে ঢাকিয়া সংসার-প্রীতি এবং ঈশ্বরকে ডাকিয়া সংসার-প্রীতি ; প্রথমটি অবৈধ প্রীতি, দ্বিতীয়টি বৈধ প্রীতি। অবৈধ সংসার-প্রীতি ঈশ্বরপ্রীতির যেমন প্রতিকূল, বৈধ সংসারপ্রীতি ঈশ্বর-প্রীতির তেমনি অনুকূল । যাহাদের সংসার পুণ্য-সংসার এবং র্যাহাদের প্রতি বৈধ প্রীতি, র্তাহারাই ঈশ্বরকে উদ্দেশ করিয়া মুক্ত প্রাণে বলিতে পারেন যে, “এক ভানু অযত কিরণে উজলে যেমতি সকল ভুবন, তোমার প্রীতি হইয়ে শতধা বিরচয়ে সতীর প্রেম জননি হৃদয়ে করে বসতি !” সংসার যত দিন আছে ততদিন তাহ আত্মার ধৰ্ম্মক্ষেত্র,—কিন্তু কত দিন ! মৃত্যু আসিয়া যখন আত্মার পিঞ্জর ভাঙ্গিয়া দেয়, তখন সংসারই বা আত্মার কে, আর, আত্মাই বা সংসারের কে ? আত্মা চিরস্থায়ী—সে চায় চিরস্থায়ী প্রেম ; ক্ষণস্থায়ী প্রেমে আত্মার কি হইবে ? ক্ষণস্থায়ী সংসার দিয়া চিরস্থায়ী আত্মাকে ভুলাইয়া রাখিতে যাওয়া সমুদ্রে অর্ঘ্যদান মাত্র । সংসার যেমন ক্ষণস্থায়ী, মনুষ্যের মনোবৃত্তি সকলও তেমনি ক্ষণস্থায়ী । দিনরাত্রি সন্ধ্যা যেমন চক্রবৎ পরিবর্তন করিতেছ, আমাদের মনের বৃত্তি-সকলও সেইরূপ চক্রবৎ পরিবর্তন করিতেছে । বৃত্তি-শব্দের অর্থই হ’চ্চে—বৃত্তের ন্যায় পুনঃপুনঃ আবৃত্তি—ঘুরিয়া ফিরিয়া যাতায়াত। বাহিরে দিন রাত্রি এবং অন্তরে মনোবৃত্তি উভয়েই উভয়ের সঙ্গে লয় তান মিলাইয়া পুনঃপুনঃ আবর্তিত হইতেছে। বহির্জগতে যখন রাত্রি আগমন করে, অন্তর্জগতে তখন নিদ্রা আগমন করে ; বহির্জগতে যখন চন্দ্রমা অস্তমিত হইয়া