পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (সপ্তম কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

" সিন্দুরীয়াপটা চতুর্থ সাৎসরিক ব্রাহ্মসমাজ ১৪৯ প্রস্থান করিবার সময় কি লইয়া যাইব, এক সঙ্গে লইতে সমর্থ হইব না। একাকী আসিয়াছিলাম, একাকী চলিয়া যাইব । তখন আপনার ভাগ্য আর সংসারের উপর থাকিবে না ; তখন আপনার ভাগ্য আর বন্ধুবান্ধবের হস্তে থাকিবে না ; তখন আপনার ভাগ্য আপনাতেই বিদ্যমান দেখিব । ভাবিয়া দেখ, তাহা সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য হইবে । ধন ঐশ্বৰ্য্য আমার নয়, মান সন্ত্রম ক্ষণের জন্য । তার পর আর কিছুই পাইব না । কেবল আস্থার চরিত্র তাত্মার সঙ্গে সঙ্গে থাকিবে ; এবং তাঙ্গার উপরেই আমা- ৷ দের সুখ ও সৌভাগ্য শাস্তি ও আরাম । নির্ভর করিবে । এখানে আমাদের প্রতি-কৰ্ম্ম ও প্রতি-চিন্তু আত্মার সেই চরিত্র নিৰ্ম্মাণ করিতেছে। অতএব এখন অবধিই প্রতি- , পাপমল অপে অপে সঞ্চিত হইতেছে । দিন ও প্রতিক্ষণ সাবধান হইয়া চিন্তা কর ও সাবধান হইয়া কৰ্ম্ম কর। চিন্তা ও কৰ্ম্ম । দ্বারা আমাদের চরিত্রে এত বিন্দু বিন্দু করিয়া । পাপমলা প্রবিষ্ট হইতে পারে যে আমরা ; তাহার কিছুই ধরিতে পারি না । কিন্তু সেই | সমস্ত বিন্দু বিন্দু পাপ একত্র রাশীকৃত হইয়া | মৃত্যু হইলেই শরীরের রোগ অবসান হয় । যখন আত্মাকে দগ্ধ করিতে থাকিবে, তখন হাহাকার করিয়া ক্ৰন্দন করিতে হইবে। কেহই তাহা নির্বাণ করিতে পারিবে না। যখন রোগী বিকার-যন্ত্রণায় অস্থির হইতে থাকে, অনবরত গাত্রদাহ হয়, পিপাসায় কণ্ঠ শুষ্ক হইয়া যায় ও শরীরের প্রতি বিস্থ হইতে ক্লেশরাশি উৎপন্ন হইতে থাকে, তখন ধন জন, গৃহ সম্পত্তি ও মান মর্যাদা কি তাহাকে সান্থন করিতে পারে ? এই বিকারের যন্ত্রণা মনে করিয়া দেখ ; কিন্তু শরীরের রোগ অপেক্ষ আত্মার রোগ আরো ভয়ানক। মৃত্যু হইলেই শরীরের রোগ হইতে মুক্তি লাভ হয় ; কিন্তু আত্মার মৃত্যু নাই। যত দিন আমাদের রক্ত সতেজ থাকে, তত দিন নানা কুপথ্য করিয়াও হয় তো সুস্থ থাকিতে পারি ; কিন্তু প্রতি কুপথ্যেই আমাদের অজ্ঞাতসারে বিন্দু বিন্দু করিয়া স্বাস্থ্যের ভঙ্গ হইতে থাকে: পরিশেষে এক সময়ে সমুদায় কুপথ্যের প্রতিফল একত্র হইয়া আমাদিগকে অনিবাৰ্য্য । আমার নয়, খ্যাতি প্রতিপত্তি আমার নয় ; রোগে আক্রমণ করে ও আমাদের শরীরকে এখানে যাহা লইয়া ভাগ্যের বিচার হয়,তাহার । কিছুই আমি লইতে পারিব না। যত ক্ষণ । এই শরীরে অবস্থান করিতেছি, উহা তত করি না, যা ইচ্ছা করিতেছি বিষয় কৰ্ম্মের একে বারে ভগ্ন করিয়া ফেলে। সেই ৰূপ । এখন আমরা কিছুই ভাবি না, কিছুই মনে ব্যস্ততা, আমোদ প্রমোদের কোলাহল ও মান মর্যাদার আড়ম্বরে অকুতোভয়ে সঞ্চরণ করিতেছি । সুখের উপর সুখ, আনন্দের উপর আনন্দ ও জয়ের উপর জয় লাভ করিতেছি । কিন্তু ঈশ্বরকে প্রতারণা করিবার উপায় নাই। উহার অব্যৰ্থ নিয়মানুসারে প্রতি দুন্ধৰ্ম্মের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আত্মতে যখন সেই পাপের ভর। পূর্ণ হইবে, তখন আমাদের সমুদায় সুখসৌভাগ্য দুঃখসলিলে নিমগ্ন হইয়া ধাইবে । আত্মাতে সঙ্কটরোগ উৎন্ন হইবে, রোগীর যন্ত্রণ অপেক্ষাও শতগুণ যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে। কিন্তু আত্মার মৃত্যু নাই। যত ক্ষণ আত্মা নিষ্পাপ না হইবে, তত ক্ষণ আর কিছুতেই নিস্তার নাই । কিন্তু হায় ! এখন বল থাকিতে থাকিতে যদি সেই মঙ্গল-স্বৰূপের শরণাপন্ন না হইলাম, তবে যখন বিকারের যন্ত্রণায় অস্থির হইতে থাকিব, তখন কি সেই অমৃতসাগরে অবগাহন করিবার সামথ্য থাকিবে : যত ক্ষণ পাপের শেষ না হইবে, আত্মা যত