পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পত্র
১৩১

তুলিয়া ধরা, তাই তিনি প্রায়ই বলিতেন—"you young old men"—ওহে অকাল বার্দ্ধক্য যুবকবৃন্দ। যাঁহারা মনে করেন যে, দেশবন্ধু মদরত প্রকৃতি ছিলেন এবং যুবকদের পাল্লায় পড়িয়া যিনি ইচ্ছার বিরুদ্ধে চরমপন্থীর ন্যায় কাজ করিতেন—তাঁহারা তাহার স্বভাব ও প্রকৃতির সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। বস্তুতঃ তিনি ছিলেন চির-নবীন—চির-তরুণ—তিনি তরুণদের আশা আকাঙ্ক্ষা বুঝিতে পারিতেন; তাহাদের সুখদুঃখের সহিত সহানুভূতি করিতে পারিতেন। তিনি তরুণদের সঙ্গ ভালবাসিতেন—তাই তরুণরাও তাঁহার পার্শ্ব ছাড়িতে চাহিত না। এই সব কারণে আমি পূর্ব্বে দেশবন্ধুকে “তরুণের রাজা” বলিয়াছি।

তাঁহার ত্যাগ, পাণ্ডিত্য, বুদ্ধিকৌশল (tact) প্রভৃতি গুণের কথা দেশবাসী অবগত আছে—সে সম্বন্ধে আর কিছু বলিবার নাই। তাঁহার অলৌকিক প্রভাবের আর একটি কারণ বলিয়া আমি ক্ষান্ত হইব। সে কারণের উল্লেখ ইতিপূর্ব্বে আমি কতকটা পারিয়াছি। তিনি সর্ব্বদা অনুভব করিতেন যে, যখন যাহা তিনি করেন তাহা তাঁহার ধর্ম্মজীবনের অঙ্গস্বরূপ। বৈষ্ণব-ধর্ম্মের সাহায্যে তিনি বাস্তবজীবন ও আদর্শের মধ্যে একটা মধুর সামঞ্জস্য (synthesis) স্থাপন করিয়াছিলেন। এই সামঞ্জস্যবোধ ক্রমশঃ ওতপ্রোতভাবে তাহার প্রাণমনের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। তিনি এই অনুভূতির ফলে নিজেকে ভগবানের অনন্তলীলার যন্ত্রস্বরূপ মনে করিতেন। নিষ্কাম কর্ম্মের ফলে চিত্তশুদ্ধি ঘটিলে মানুষের “অহং কর্ত্তা” এই জ্ঞান লোপ পাইয়া আসে। অহঙ্কার লোপ পাইলে মানুষ দিব্য শক্তির আধারে পরিণত হয়। তখন তাঁহার শক্তির নিকট সাধারণ মানুষ দাঁড়াইতে পারে না। দেশবন্ধুর হইয়াছিল তাহাই; তাঁহার জীবনের শেষদিকে