তাদের কাঁথার তলা থেকে জাগাইয়া দেয়। তারা এক ছুটে আসে তিতাসের তীরে। দেখে, ফরসা হইয়াছে; তবে রোদ আসিতে আরও দেরি আছে। নিস্তরঙ্গ স্বচ্ছ জলের উপর মাঘের মৃদু বাতাস ঢেউ তুলিতে পারে না। জলের উপরিভাগে বাষ্প ভাসে–দেখা যায়, বুঝি অনেক ধোঁয়া। তারা সে ধোঁয়ার নিচে হাত ডোবায়, পা ডোবায়। অত শীতেও তার জল একটু উষ্ণ মনে হয়। কাঁথার নিচের মায়ের বুকের উষ্ণতার দোসর এই মৃদু উষ্ণতাটুকু না পাইলে তারা যে কি করিত।
শরতে আকাশের মেঘগুলিতে জল থাকে না। কিন্তু তিতাসের বুকে থাকে ভরা-জল। তার তীরের ডুবো মাঠময়দানে সাপলা সালুকের ফুল নিয়া, লম্বা লতানে ঘাস নিয়া, আর বাড়ন্ত বর্ষাল ধান নিয়া থাকে অনেক জল। ধানগাছ আর সাপলা সালুকের লতাগুলির অনেক রহস্য নিবিড় করিয়া রাখিয়া এ জল আরও কিছুকাল স্তব্ধ হইয়া থাকে। তারপর শরৎ শেষ হইয়া আসে। কে বুঝি বৃহৎ চুমুকে জল শুষিতে থাকে। বাড়তি জল শুখাইয়া গিয়া তিতাস তার স্বাভাবিক রূপ পায়। যে-মাটি একদিন অথৈ জলের নিচে থাকিয়া মাখনের মত নরম হইয়া গিয়াছিল, সে মাটি আবার কঠিন হয়। আসে হেমন্ত।
হেমন্তের মুমূর্ষু অবস্থায় কখন ধানকাটার মরসুম শুরু হইয়া গিয়াছিল। পারে সব খানেই গ্রাম নাই। এক গ্রাম ছাড়াইয়া আরেক গ্রামে যাইতে মাঝে পড়ে অনেক ধানজমি।