তৃণান্ধুর S(ł মনে হচ্চিল । মনে ভাবছিলাম। ওই নিৰ্জন শৈলশিখরে, এই ঘন বনের মধ্যের পথ দিয়ে গিয়ে ফুটুফুটে জ্যোৎস্নায় তাঁবু খাটিয়ে যারা রাত্রিযাপন করে একা একা, তাদের জীবনের অপূর্ব অনুভূতির কথা। আরও ভাবছিলাম। এই জ্যোৎস্নায় বহুদূরের বাংলাদেশের এক ছোট্ট নদীর ধারের গ্রামের একটা দোতালা বাড়ীর কথা । ভাবলাম অনেকদিন হয়ে গেছে বটে, কিন্তু সে এখন আরও কাছে কাছে থাকে-যখন খুশি সেখানে যেতে পারে।--হয়তো আজ এই জ্যোৎসারাত্রে আমার কাছে কাছেই আছে । মানসারে যেখানে নাগপুর জব্বলপুর রোড থেকে রামটেকের পথটা বেঁকে এল—সেখানে একটা P.W.I), বাংলো আছে, সামনে একটা পদ্মফুলে ভরা জলাশয়। স্থানটী অতি মনোরম। দুপুরে আজ এই ম্যাঙ্গানিজ গুলি আমরা দেখে গিয়েছিলাম-বিরাট পৰ্ব্বতের ওপর মোটর উঠিয়ে নিয়ে গেল।-অনাবৃতদেহ পৰ্বতপঞ্জর রৌদ্রে চকচক করাচে, খাড়া কেটে ধাতুপ্ৰস্তর বার করে নিয়েচে-সামনে schlist ও granite-নীচের স্তরগুলোতে কালো ম্যাঙ্গানিজ । একজন ওদেশী কেরানী আমাদের সব দেখালে, সঙ্গে দু টুকরো ম্যাঙ্গানিজ দিলে কাগজচাপ করবার জন্যে। তারই মুখে শুনলাম। এই ম্যঙ্গানিজ স্তর এখান থেকে ২৫/২৬ মাইল দূরে ভাণ্ডারা পৰ্য্যন্ত চলে গিয়েছে-মাঝে মাঝে সমতল জমি, আবার পাহাড় ঠেলে ঠেলে উঠেচে। নাগপুর-জব্বলপুর রোডে অনেক পাহাড় পড়ে জব্বলপুরে যেতে । সিউনির দিকেও পাহাড় ও জঙ্গল মন্দ নয়। কিন্তু সৰ্ব্বাপেক্ষা সুন্দর দৃশ্য নাগপুর-অমরাবতী রোডে। নাগপুর শহর থেকে ২৫ মাইল দূরবত্তী বাজারগাও গ্রাম থেকে কানহোলি ও বোরি নদীর উপত্যকাভূমি ধরে যদি বরাবর সোজা উত্তর-পশ্চিম দিকে যাওয়া - যায়, তা হোলে শৈলমালা, মালভূমি ও অরণ্যে ঘেরা এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যের সম্মুখীন হতে হবে। মানসার ছেড়ে আমরা নাগপুর-জব্বলপুর রোডে পড়লাম। দুধারে দূরপ্রসারী সমতলভূমি জ্যোৎস্নায় ধু ধূ করচে-আকাশে দু দশটা নক্ষত্রদূরে নিকটে বৃক্ষশ্রেণী। এখনও নাগপুর ২৫ মাইল। সারাদিন পাহাড়ে ওঠানামা পরিশ্রমের পর, হু হু ঠাণ্ড বাতাস বেশ আরামপ্রদ বলে মনে হচ্চে। ক্রমে কামটি এসে পড়লাম। পথে কানহান নদীর সেতুর ওপর এসে মোটরের এঞ্জিন কি বিগড়ে গেল। আমরা জ্যোৎস্নাপ্লাবিত নদীবক্ষের
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০১
অবয়ব