කම් তৃণান্ধুর দিকে চেয়ে আর একটা সিগারেট ধরলাম। পেছনে রামটেক প্যাসেঞ্জার ট্রেনখানা কানহান ষ্টেশনে দাড়িয়ে আছে—আমার ইচ্ছে ছিল ট্রেনে মোটরে একটা রেস হয়-কিন্তু তা আর হোল না, ট্রেন ছাড়বার আগেই মোটরের এঞ্জিন ঠিক হয়ে গেল। কামটিতে এঞ্জিন আবার বিগড়ালো একবার কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই ঠিক হোল। তারপর আমরা নাগপুর এসে পড়লাম—দূর থেকে ইন্দোরের আলো দেখা যাচে । কিন্তু কিনসী হ্রদের তীরের গিরিসাপুর জঙ্গল আমি এখনও ভুলিনি। শরতের নীল আকাশের তলায় সেই নিবিড় ছায়ানিকেতন আরন্য প্রদেশটিী আমার মনে একটা ছাপ দিয়ে গেছে। আহা ঐ বনের শিউলী গাছগুলোতে যদি ফুল ফুটুতো, আরও যদি দু' চার ধরণের বনফুল দেখতে পেতুম—তবে আনন্দ আরো নিবিড় হোত-কিন্তু এমনি কত দেখোঁচি, তার তুলনা নেই। বুনো বাঁশের ছোট ছোট ঝাড়গুলিব কি শ্যামল শোভা । পূজোর ছুটি ফুরিয়ে যাবে, আবার কলকাতার লোকারণ্যের মধ্যে ফিরে যাবো, আবার দশটা পাঁচটা স্কুলে ছুটুবো, আবার অপকৃষ্ট ‘ক্যালকাটা কেবিনে’ বসে চা ও ডিমের মামলেট খাবো।--তখন এই বিশাল পার্বত্যকায় সরোবর, এই শরতের রৌদ্রছায়াভিরা কটুতিক্ত গন্ধ ওঠা ঘন অরণ্যাণী, এই জ্যোৎস্নাপ্লাবিত নিৰ্জন গিরিসানু-এই আম্বারা, কিনসী, রামটেকের মন্দির-দুর্গ-এসব বহুকাল আগে দেখা স্বপ্নের মত অস্পষ্ট হয়ে মনের কোণে উকি মারবে। একটা কথা না লিখে পারাচি নে। আমি তো যা দেখি, তাই আমার ভাল লাগে-বিশেষ করে যদি সেখানে বন থাকে। কিন্তু তবুও লিখচি আমি এপৰ্যন্ত যত পাহাড় ও অরণ্য দেখোঁচি-চন্দ্রনাথ, ত্ৰিকুট, কাটুনি অঞ্চলের পাহাড়-ডিগরিয়া ও নন্দন পাহাড়ের উল্লেখ করাই এখানে হাস্যকর, তবুও উল্লেখ করাচি এইজন্যে যে এই ডায়েরীতেই কয়েক বছর আগে আমি নন্দন পাহাড়ের সুখ্যাতি করে খুব উদ্দামপূর্ণ বর্ণনা লিখেচি-এসব পাহাড় কিনসী ও রামটেকের কাছে মান হয়ে যায় সৌন্দৰ্য্য ও বিশালতায় । কাল নাগপুর থেকে চলে যাবো। আজ রাত্রে নির্জন বাংলোয় বারান্দাতে বসে জ্যোৎস্নাভিরা কম্পাউণ্ডের দিকে চেয়ে শরৎচন্দ্ৰ শাস্ত্রীর "দক্ষিণাপথ ভ্ৰমণ’ পড়চি। সেই পুরোনো বইখানা সিদ্ধেশ্বর বাবুদের আপিসে কাজ করবার সময় টেবিলের ডুয়ারে যেখানা লুকোনো থাকত। কাজের ফাকে ফাকে চাই করে একবার বার করে নিয়ে পাহাড়, জঙ্গল, দূরদেশের বর্ণনা
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০২
অবয়ব