তৃণান্ধুর ܬܬ নাগপুর থেকে ফিরেই দেশে গিয়েছিলাম। ইচ্ছামতী দিয়ে নৌকোতে বিকেলের দিকে গ্রামের ঘাটে পৌছুলাম-বাল্যে একটা কি ছেলেদের কাগজে একটা কবিতা পড়েছিলাম ঘাটের বাটে লাগলো যাবে আমার ছোট তরী, ঘনিয়ে আসে ধরায় তখন শীতের বিভাবেরী । এতকাল পরে সেই দুটী চরণই বার বার মনে আসতে লাগল। মাধবপুরের মাঠে সুৰ্য্য অস্ত গেল, চালতেপোতার বঁাকের সবুজ ঝোপঝাপ দেখলাম-এবার কিন্তু চোখে লাগল না তেমন। কেন এমন হোল কি জানি ? অবশ্য একথা ঠিক, এমন ঘন সবুজ ও নিবিড় বনসম্পদ C, P. অঞ্চলের নেই-সে হিসেবে বাংলাদেশের তুলনা হয় না ওসব দেশের সঙ্গে ; কিন্তু ভূমিসংস্থান বিষয়ে বাংলা অতি দীন । জলকাদা, ডোবা, জলা, ugly জঙ্গল,-এ বড় বেশী। লোকেও ভূমিশ্ৰী বদ্ধিত করতে জানে না, নষ্ট করতে পারে। নানা কারণে বর্ষাকালে বাংলাদেশ আদৌ ভাল লাগে না। আবার খুব ঘন বর্ষায় খুব ভাল লাগে-যেমন শ্রাবণ ভাদ্র মাসের অবিশ্রান্ত বর্ষণের দিনগুলিতে, যখন জলে থৈ থৈ করে চারিধার। শেষ শরতের এসব বর্ষায় সৌন্দৰ্য্য নেই, কিন্তু অসুবিধে ও শ্ৰীহীনতা যথেষ্ট । গাছেপালায় মনকে বড় চাপা দিয়ে রাখে । এবার কলকাতা বড় ভাল লাগচে । কাল সাহেবের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েচি সারাদিন। সকালে বিশ্বনাথের মোটরে গোপালনগর গিয়েছিলাম--তারপর লাঙ্গলচষার প্রতিযোগিতা হোল, ছেলেদের দৌড় হোল-তারপর বিকেলে বেলেডাঙ্গা গেলাম। সেখানে একটা ডাব খাওয়া গেল। স্কুলে যুগল শিক্ষক এল। দেশ, খয়রামারির মাঠ এত ভাল লাগচে৷ এবার | কাল হারাণ চাকলাদার মহাশয়ের ছেলের কৃষিক্ষেত্র দেখতে গিয়েছিলাম-মাঠের মধ্যে ফুলের চাষ করেচে-বেশ দেখাচ্চে। একটা ষাড়া গাছের কুঞ্জবন বড় সুন্দর। এবার জ্যোৎস্না খুব চমৎকার-শীতও বেশ। রোজ খয়রামারির মাঠে বেড়াই। আজ এক যাবো। একলা না গেলে কিছু হয় না।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৫
অবয়ব