У о о তৃণান্ধুর রাজনগরের বটতলায় রোজ বেড়াতে যাই। সামনে অপরূপ রঙে রঞ্জিন সূৰ্য্য অস্ত যায় দিগন্তের ওপারে, নিঃশব্দ, নিস্তব্ধ চারিদিক-মাটির সুভ্রাণ স্মরণ করিয়ে দেয় ইসমাইল।পুরের জনহীন চড়ায় এমন সব শীতের সন্ধ্যা, কত সুদীর্ঘ অন্ধকার রাত্রি, কত কৃষ্ণা নিশীথিনীর শেষ যামের ভাঙা চাদের জনমানবহীন বনের পেছনে অস্ত যাওয়া, কত নীল পাহাড় ঘেরা দিকচক্ৰবাল, বিষম শীতের রাত্রে ঘনোৱী তেওয়ারীর মুখে অদ্ভূত গল্প শোনা অগ্নিকুণ্ডের চারিধারে বসে বসে । সে সব দিন আজকাল কতদূরের হয়ে গেছে। আজ নববর্ষের প্রথম দিনটাতে সকালে নীরদবাবুদের সঙ্গে বহুকাল পরে বেলুড় গিয়েছিলাম। পেছনের ছাদটাতে বসে আবার পুরোণো দিনের মত কত গল্প করলাম। পেছনের ছাদটী, বেলুড়ের বাড়ীর চারিপাশের বাগান এত ভাল লাগল। ভেবেছিলাম। এখানে আর আসা হবে না। সেই বেলুড়ে আবার যখন আসা হোল,—বিশেষ কালে সেই শীতকালেই, যে শীতকালের রাত্রির সঙ্গে বেলুড়ে যাপিত কত রাত্রির মধুর স্মৃতির যোগ রয়েচে-তখন জীবনের অসীম সম্ভাব্যতার উপলব্ধি করে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। সবাই মিলে আমরা চড়ুইভাতি করে খেলাম নীচের রান্নাঘরটাতে। পেঁপেঁর ডাল হাতে বুদুরে পিঠ দিয়ে বসলাম মালীর ঘরের সামনে, নীচের ছাদটিায়। ফলসা গাছের ডালের সেই অপূর্ব অবনমন দেখলাম, যা ওই ফলসা গাছটারই নিজস্ব, অন্য গাছের এ সৌন্দৰ্য্যভঙ্গী দেখিনি কখনো-বাগানের পাচীলের ওদিকে পাটের কলে নিবারণ মিস্ত্রীর সেই গোলপাতার ঘরখানা, শীতের দিনে গাদ্দাফুল-ফোটা নিকানো দুপাশে তক্তকে উঠোন,-সব যেন পুরাতন, পরিচিত বন্ধুর মত আমাদের প্রাণে তাদের স্নেহস্পর্শ পাঠিয়ে দিলে। বড় ভাল লাগল। আজ বেলুড় । সন্ধ্যার আগেই মোটরে চলে এলাম। কলকাতায়। কাল গিয়েছে পূর্ণিমা আজ প্ৰতিপদের চাদ রাত সাড়ে সাতটার পরে উঠল। ধোয়া নেই, এই যা সৌভাগ্য। অনেকদিন পরে আজ আমড়াতলার গলির মুখে গিয়ে পড়েছিলাম এতদিন চিনিনি—আজি চিনেচি। এবার ইষ্টারের ছুটীটা কাটাতে এলুম। এখানে। সেবার এসে নীলঝর্ণার
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬
অবয়ব