তৃণাকুর So a গোপালনগরের হাটেও ওই দর। এবার তাতে আবার পটল জন্মায় নি। যে দুব্বচ্ছর পড়েচে বাবু! কলকাতাটা যেন ভুলে গিয়েচি। যেন চিরকাল এই বটের সারি, বাওড়, সুন্দরপুর, সখীচরণের মুদীখানার দোকানে কাটাচ্চি জীবনটা । এদের শান্ত সঙ্গ আমার জীবনে আনন্দ এনেচে উগ্র দুরাশার মত্ততা ঘুচিয়ে। সে দুরাশাটা কি ? নাই বা লিখলাম সেটা । আজ বিকেলে সারা ঈশান কোণ জুড়ে কালবৈশাখীর মেঘ করল এবং ভয়ানক ঝড় উঠল। হাজরী জেলেনী, জগবন্ধু, কালো, জেলি ওরা আম কুড়তে গেল বাগানে—কারণ এখনও আমি যথেষ্ট আছে, ঝিনুকে গাছে, চারা বাগানে, মাঠের চারায় । তারপর ঘন বর্ষা নামলো-আমি আর কালো বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম বর্ষাক্সাত গাছপালা, বটের সারি, উলুর মাঠের মধ্য দিয়ে বেলেডাঙাতে। সেখান থেকে যখন ফিরি, বর্ষা আরও বেশি, বিদ্যুতের এক একটা শিখা দিক থেকে দিগন্তব্যাপী-আকাশে কালো কালে মেঘ উড়ে চলেচে-আমার মনে হোল আমিও যেন ওদের সঙ্গে চলেচি মহাব্যোম পার হয়ে চিন্তাতীত কোন সুদূর বিশ্বে-আকাশ মহাকাশে আমার সে গতি-পৃথিবীর সমস্ত বন্ধন, সুখদুঃখ ঘরগৃহস্থালীর বন্ধনমুক্ত আমার আত্মা, সে পায়ের তলায় সারা পৃথিবীর মোহ মাড়িয়ে চলেচে-মহাব্যোমের অন্ধকার, শূন্য, মেঘ, ইথার, সমুদ্র ভেদ করে মুক্তপক্ষ গতিতে অমিত তেজে চলেচে-দিকপাল বৈশ্রাবণের বিশ্ববিদ্রাবণকারী পৌরুষেয় বীৰ্য্যে। নদীতে স্নান করতে নেমে সাতার দিয়ে বৃষ্টি মাথায় চলে গেলুম ওপারে মাধবপুরের চরের ওপর বর্ষা দেখতে-পশ্চিম দিকে পিঙ্গল বর্ণের মেঘ হয়েচে, ওপারের বঁাশবন হাওয়ায় দুলচে-তারপর আমরা আবার এপারে এলাম-ঠিক সন্ধ্যার সময় বাড়ী এলাম । আজকার সন্ধ্যাটি ঠিক বর্ষাসন্ধ্যা-কিন্তু কেমন যেন নিঃসঙ্গ মনে হচ্চে । যেন আর কেউ থাকলে ভাল হোত-কত থাকলেই তো ভাল হোত-সব সময় छ् ? আমার মনে এই যে অনুভূতি-এ অনেক কাল পরে আবার হোল। আমি কত নিঃসঙ্গ নিৰ্জন জীবন যাপন করেচি। কতকাল ধরে, লোকালয় থেকে
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৩
অবয়ব