> oや তৃণান্ধুর স্বষ্টি করে -যেমন র্যাড়া, কুঁচলতা, ঐ নাম-না-জানা গাছটা-এর যে কোন বিখ্যাত পার্কের সৌন্দৰ্য্য ও গৌরব বৃদ্ধি করতে পারে। সেদিন যখন আমি, রাণু, খুড়ীমা, ন'দি নদীতে বিকেলে স্নান করচি, তখন একটা অদ্ভুত ধরণের সি দুরে মেঘ করলে-ওপারের খড়ের মাঠের উলুবনের মাথা, শিমূল গাছের ডগা, যেন অবাস্তব, অদ্ভুত দেখাল, যেন মনে হচ্চিল ওখান থেকেই নীল আকাশটার শুরু । কিন্তু কাল সন্ধ্যায় এক নদীতে নেমে যে অপূর্ব অনুভূতি হয়েছিল তা বোধহয় জীবনে আর কোনো দিন হয়নি। মাথায় তার একটা তারা উঠেচেদূরে কোথায় একটা ডাহুক পাখী অবিশ্রান্ত ডাকচে। মাধবপুরের চরের দিকে ভায়োলেট রঙের মেঘ করেচে-শান্ত, স্তব্ধ নদীজলে তার অস্পষ্ট প্ৰতিবিম্ব । মানুষ চায় এই প্ৰকৃতির পটভূমির সন্ধান। এতদিন যেন আমার Emerson-এর মতের সঙ্গে খুব মিল ছিল—সেদিনও বঙ্গশ্ৰী অফিসে কত তর্ক করেচি, আজ একটু মনে সন্দেহ জেগেচে । মানুষ এই স্বষ্টিকে মধুরতর করেচে। ওই দূর আকাশের নক্ষত্রটি-ওর মধ্যেও স্নেহ, প্ৰেম, যদি না থাকে, তবে ওর সার্থকতা কিছুই নয়। হৃদয়ের ধৰ্ম্ম সব ধৰ্ম্মের চেয়ে বড়। আজ সকাল থেকে বর্ষা নেমেচে । ঝিম্ ঝিম বাদলা, আকাশ অন্ধকার। আজ এই মেঘমেদুর সকালে একবার নদীর ধারে বেড়িয়ে আসতে ইচ্ছে করচে-বাওড়ের ধারের বেলে মাটীর পথ বেয়ে একেবারে কুঁদীপুরের বাওড় বঁায়ে রেখে মোল্লাহাটীর খেয়া পার হয়ে, যেতে ইচ্ছে হচ্চে পিসিমার বাড়ী পাটুশিমলে বাগান গা । কাল সুন্দরপুর। পৰ্য্যন্ত বেড়াতে গিয়েছিলুম। বৈকালে— ও পথের প্রাচীন বট গাছের সারির দৃশ্য আমি আবাল্য দেখে আসচি, কিন্তু ও পুরোণে হোল না-যত দেখি ততই নতুন। গাছে গাছে খেজুর পেকেচে, কেয়োঝাঙ্গা গাছের তলায় ব্যাঙের ছাতা গজিয়েচে এই বর্ষায় । আরামডাঙার মাঠে মরগাঙের ওপারে, সবুজ আউশ ধানের ক্ষেত এবং গ্রাম সীমায় বঁাশ বনের সারি মেঘ মেদুর আকাশের পটভূমিতে দেখতে হয়েচে যেন কোন বড় শিল্পীর হাতে আঁকা ল্যাণ্ড স্কেপ । ক্ষেত্র কলু ওদিক থেকে ফিরচে, হাতে ভাঙা লণ্ঠন একটা । বল্পে মোল্লাহাটির হাটে পটল কিনতে গিয়েছিল। -পটল না কিনেই ফিরলে যে ? -কি করবো বাবু, ছ’পয়সা সেরা দর। একটা পয়সাও লাভ থাকচে না ।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১২
অবয়ব