У У о তৃণান্ধুর বল্পে-জন্মাষ্টমীর ছুটীতে আসবেন তো ? আমি বল্লাম-যদিই বা আসি, তোর সঙ্গে আর তো দেখা হবে না । তুই তার আগেই ত চলে যাবি। এদেব কথা ভেবে কলকাতায় প্রথম প্ৰথম কষ্ট হবে। পূজার ছুটীতে বাড়ী এসেচি। রাখামাইনস গিয়েছিলাম। সেখানে একদিন একা মেঘান্ধকার বিকালবেলাতে সাটকিটার অরণ্যময় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম। এই পথে একা যেতে ওদেশের লোকেও বড় একটা সাহস করে না-যখন একটা ছোট পাহাড়ী ঝর্ণায় নেমে রবীন্দ্ৰনাথের চিঠির একটা অংশ সেখানে রেখে দিচ্চি, কাল নীরদবাবুদের বিশ্বাস করাবার জন্যে, তখন সেখানে কুলুকুলু ঝরণার শব্দটী মেঘশীতল বৈকালের ছায়ায় কি সুন্দর লাগছিল! পাহাড়ের saddleটা যখন পার হচ্চি তখন ঝমােঝম করে বৃষ্টি নামল, হাজার হাজার বনস্পতির পাতা থেকে পাতায় ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ছিল। দূরের কালাঝোরি পাহাড় মেঘের ছায়ায় নীল হয়ে উঠেচে-ধোয়া ধোয়া মেঘগুলো জড়িয়ে জড়িয়ে খেলা করচে । কালিদাসের “সানুখান আম্রকুট” কথাটী বার বার মনে পড়ছিল--একা সেই মহুয়াতলায় শিলাখণ্ডে বসে। একদিন রাখামাইনস-এর বাংলোর পিছনে বনতুলসীর জঙ্গলে ভরা পাহাড়টার মাথায় অস্তগামী সুৰ্য্যের আলোতে বসেছিলাম। ওদিকে রাঙা রোদমাখানো সিদ্ধেশ্বর ডুংরির মাথাটা দেখা যাচ্চে, এদিকে পাহাড়ের Ledge থেকে দূরে গালুডির চারুবাবুর বাংলো দেখা যাচ্চে—সেদিন কি আনন্দ যে মনে এল-তার বর্ণনা ভাষায় দেওয়া যায় না । সেদিন আবার বিজয়া দশমীনীল বর্ণার ধারে একটা শিলাখণ্ডে একা বসে রইলাম সন্ধ্যাবেলাতে, ক্রমে জ্যোৎস্না উঠল, মহুয়াতলার ঘাট দিয়ে পাহাড়ের দিক দিয়ে ঘুরে আসতে আসতে কুসুমবনীতে উড়িয়া মুদ্দীর দোকানে গেলাম সিগারেটু কিনতে । আশ্চৰ্য্যের বিষয় এইখানে হঠাৎ নীরদবাবুর সঙ্গে দেখা হোল। তিনি ও র্তার স্ত্রী Shanger সাহেবের বাংলো থেকে চা খেয়ে ঐ পথে মেঘ-ঢাকা অস্পষ্ট জ্যোৎস্নাতে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন-বিজয়ার কোলাকুলি সেই দোকানেই সম্পন্ন হোল। ভাবলাম আজ আমাদের দেশে বাওড়ের ধারে বিজয়া দশমীর মেলা বসেচে ।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৬
অবয়ব