ΣΣ) 8 তৃণাঞ্চুর ফলে সকলেরই বেড়ানো বন্ধ হোল। রাত্রে খুকুকে অনেক গল্প শোনালাম অনেক রাত পৰ্য্যন্ত । আজ সকালে ভ্ৰাতৃদ্বিতীয়া । রায়বাড়ীর পাচী কাদচে, ওরা দাদা আশু মাসখানেক হোল মারা গিয়েচ, সেই জন্যে। পাড়াগায়ের মেয়ের ধরণে “ও ভাই রে, বাড়ী এসো’, বলে চেচিয়ে কঁাদচে । কিন্তু আমার মনে সত্যিই দুঃখ হোল ওর জন্যে। পাচীকে এ গায়ের সব লোকেই “দূর, ছাই’ করে, সবাই ঘেন্না করে-আজ পাচী। ওদের সবারই বড় হয়ে গিয়েচে । তবুও তার -প্ৰতি সহানুভূতি নেই কারুর-কান্না শুনে পিসিমা বলচেন, মুখ বেঁকিয়ে—“আহা ! মনে পডোচে বুঝি ভাইকে !” নৌকা করে বনগায়ে যাচ্চি সকালবেলা। চালকীর ঘাটে এসেচি-এবার এদিকের গড় ভেঙেচে। কেমন নীল রং-এর একটা পাখী বাবলা গাছে বসে শিস দিচ্চে। নৌকোর দুলুনিতে লেখার বড ব্যাঘাত হচ্চে। নীল কলমীর ফুল, হলদে বড় বড় বন ধুধুলের ফুল ফটেচে । আর এক রকম কি লতায় কুচে কুচো হলদে ফুল ফুটে চালতেপোতার বঁাকে ঝোপের মাঝে আলো করে রেখেচেৰ-সে যে কি অপূর্ব সুন্দর তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই ফুলের নাম জানি নে, যেন হলদে নক্ষত্ৰ ফুটে আছে-ছোট ছোট ক্ষুদে ক্ষুদে, যেন নববধূর নাকছবি। কাৰ্ত্তিকের শেষে এই ফুলটা ফোটে জেনে রাখলাম, আবার আসচে বছর দেখতে আসবো। এতদিন এ ফুল আমার চোখে পড়েনি। হেমন্তে এত বনের ফুলও ফোটে এদেশে ! ঝোপের মাথা আলো করে সবুজ পাতালতার মধ্যে তিৎছন্নার ফুল, ক্ষুদে ক্ষুদে ঐ অজানা ফুল, মাঝে মাঝে বড় বড় বনকলমীর ফুল-কি রূপ ফুটেচে প্ৰভাতের। কাশফুল তো আছেই মাঝে মাঝে, নদী তীরের কি অপূর্ব শোভা এখনতা ছাড়া পুম্পিত সপ্তপর্ণ ও মাঝে মাঝে যথেষ্ট । ঐ অজানা ফুলটা মাঝিকে দিয়ে ঝোপ থেকে পাড়িয়ে আনলাম-দশটী করে ছোট ছোট পাপড়ি—ছটা করে পরাগ কোষ বা গৰ্ভকেশর প্ৰত্যেকটাতে। জলে কচুরীপানার ফুল ফুটেচে, অনেকটা কাঞ্চন ফুলের রং কিন্তু দেখতে বড় চমৎকার-একটা লম্বা সরস সবুজ ডাটায় থোকা থোকা অনেকগুলো ফুল-ঐ সুন্দর ফুলের জন্যেই কচুরীপানা সৃষ্টির মধ্যে অক্ষয় হয়ে থাকবে-ভগবানের কাছে সুন্দরের সার্থকতা আমার-তার
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২০
অবয়ব