তৃণান্ধুর পরিচয় । কেউ বেঁচে আছে, কেউ বা হয় তো আজ নেই-এদের সকলের দুঃখ, সকলের ব্যর্থতা, বেদনা আমাকে প্রেরণা দিয়েচে-কারুর সঙ্গে দেখা দিনে, কারুর সঙ্গে রাত্ৰে,-মাঠে বা নদীর ধারে, সুখে কিংবা দুঃখে । এরা আজ কোথায় আছে জানিনে। কোথায় পাবো ঝালকাটির সেই ভিখারীকে, কোথায় পাবো। আজ হিরুকাকাকে, কোথায় পাবো কামিনী বুড়ীকে—কিন্তু এই নিস্তব্ধ রাত্রির অন্ধকার-ভরা শান্তির মধ্য দিয়ে আমি সকলকেই আমার অভিনন্দন পাঠিয়ে দিচ্চি। যারা হয়তো আমার ছাপা-বই দেখলে খুসি হোত তারাও অনেকে আজ বেঁচে নেই-তাতে দুঃখিত নই, কারণ গতিকে বন্ধ করার মূলে কোনো সার্থকতা নেই তা জানি- তাদের গমনপথ মঙ্গলময় হৌক, তাদের কথাও আমার মন থেকে মুছে যায়নি। আজ রাত্রে। আজই সকালে দেশ থেকে এলুম। কাল বৈকালে গিয়েছিলুম বারাকপুরে। সাইমার বড় অসুখ । ষষ্ঠীর হাট বাজার, জেনি গোপাল নগর থেকে নিয়ে এল ঘি, ময়দা । নগেন খুড়ো সপরিবারে ওখানেই । কি সুন্দর বৈকাল দেখলুম! সে আনন্দের কথা আর জানাতে পারি নে-ঝোপে ঝোপে নীল অপরাজিতা, সুগন্ধ নাট। কঁাটার ফুল, লেজ ঝোলা হলুদডানা পাখীটা-অস্তসুৰ্য্যের রাঙ্গা আভা, নীল আকাশ, মুক্তির আনন্দ, কল্পনা, খুশি। আজ এখন সুন্টুকেশ গোছাচ্চি। এই মাত্র আমি ও উপেন বাৰু টিকিট করে এলুম, আজ রাত্রের ট্রেণে যাবো দেওঘর। কাল আবার সপ্তমী । ওখান থেকে হাজারিবাগ যাবার ইচ্ছে আছে দেখি কি হয় । সেই “রাতের ঘুম ফেলানু মুছে” গানটা মনে পড়ে। সেই অশ্বিনী বাবুর বোর্ডিং-এ, ১৯১৮ সালে। আজ শ্যামাচরণদাদাদের “মাধবী কঙ্কণ” বই খান এনেচি। সেই কতকাল আগেকার সৌন্দৰ্য্য, সেই পূজোর পর বাবার সঙ্গে ম্যালেরিয়া নিয়ে প্রথম বাড়ী যাওয়া,-সেই দিদিম। সে সব অপূৰ্ব স্বপ্ন-ভরা দিনগুলি ! জীবনটা যে কি অদ্ভুত, অপূৰ্বতা যারা না ভেবে দেখে তারা কি করে বুঝবে!-- কি করে তারা বুঝবে কি মহৎ দান এটা ভগবানের।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫
অবয়ব