У о তৃণান্ধুর সকালে আমরা মোটরে করে বার হলুম-আমি, উপেন বাবু, অমর বাবু, করুণাবাবু। ঝরণার কি সুমিষ্ট জল। - একটু একটু বৃষ্টি হােল। কিন্তু পথের দুধারে কি অপূর্ব গাছপালা, লতাপাত, শালচারা, ঝরণা, বঁাশবন-দুধারের ঘন জঙ্গলে জংলা মেয়েরা কাঠ কাটুচে-কি সুন্দর মেঘের ছায়া-ত্রিকুটের দু এক স্থান থেকে নীচের দৃশ্য বড় মনোরম। একস্থানে বঁশের ছায়ায় বসে ডায়েরী রাখলুম। বড় সুন্দর দৃশ্য ! অৰ্দ্ধেকটা উঠে বড় পরিশ্রম হোল বলে—সকলে উপরে উঠতে চাইলেন না। “অয়ি কুহকিনী লীলে-কে তোমারে আবরিল।” দিব্য শালবনের ছায়ায় বসে-ডায়েরী রাখলুম। আবার মনে পড়ে-বাড়ীর কথা । আজ বিজয় দশমী । আকাশও বেশ পরিষ্কার। সকালের দিকে আমরা সকলে মোটরে বার হয়ে প্রথমে গেলুম পূৰ্ণবাবুর বাড়ী। সেখানে আজ ওবেলা কীৰ্ত্তন হবে, পূৰ্ণবাবু, আসবার নিমন্ত্রণ করলেন। সেখান থেকে বিমানবাবুর বাড়ী। আমি ও করুণাবাবু মোটরে বসে রইলুম—আমর বাবু ও উপেনবাবু নেমে গেলেন। সেখান থেকে কণীবাদে ফকিরবাবুর ওখানে যাওয়া গেল। একটু দূরে মাটির মধ্যে তপোবনের পাহাড়টা চোখে পড়ল। কালকার বালানন্দ স্বামীর আশ্রমটাও পাশেই পড়লো দেখলুম। আজ কিন্তু সেখানে লোকের ভিড় ছিল না-কতকগুলি এদেশী স্ত্রীলোক রঙ্গিন কাপড় পরে দাড়িয়েছিল দেখলুম। সেখান থেকে করুণাবাবুর বাড়ী হয়ে এক ব্যারিষ্টারের বাড়ীতে অমরবাবুর কি কাজ ছিল তা সেরে যাওয়া গেল দুৰ্গামণ্ডপে ঠাকুর দেখতে । দুৰ্গাপ্রতিমা ভারী সুন্দর করেচে-অমন সুন্দর প্রতিমার মুখ অনেকদিন দেখি নাই। তারপরে বাঙ্গালীদের পূজামণ্ডপে এসে খানিকক্ষণ থাকতেই তারা খেতে বল্পে। কিন্তু আমি তখনও স্নান করি নাই । কাজেই আমার হোল না । বৈকালে নন্দন পাহাড় বেড়াতে গেলুম। এত সুন্দর স্থান আমি খুব বেশী দেখি নাই, একথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে। পাহাড়ের উপর গাছপালা বেশী নাই, বন্য আতাগাছই বেশী। কিন্তু পিছনে ধূসর ত্রিকূট পাহাড়ের দৃশ্য ও সম্মুখে অস্তরাগ-রক্ত আকাশের তলে ডিগরিয়া পাহাড়ের শান্ত মূৰ্ত্তি বাস্তবিকই মনে এক অদ্ভুত ভাব আনে। দূরে দূরে শাল মহুয়া বন, শুধু উচু নীচু ভূমি ও বড় বড় পাথর এখানে ওখানে পড়ে আছে।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬
অবয়ব