পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(খৃষ্টীয় ষষ্ঠ হইতে অষ্টাদশ শতাব্দী) ত্রিপুরাধিপতিগণ একাদিক্রমে “উদয়পুর” নামে খ্যাত ত্রিপুররাজ্যের এই রাজধানীতে রাজত্ব করিয়াছিলেন। কিন্তু মধ্যে মধ্যে কোন কোন ত্রিপুরেশ যে অন্যত্রও রাজধানী স্থাপন না করিয়া ছিলেন এমন নহে।

 ত্রিপুরাধিপতি যুঝারফা বাহুবলে বঙ্গদেশেরও কিয়দংশ অধিকার করিয়াছিলেন। এই বিষয রাজমালায় নিম্নলিখিত রূপ বর্ণিত আছে।—

“এই মতে রাঙ্গামাটি ত্রিপুরে লইল।
নৃপতি যুঝার পাট তথাতে করিল।

* * * *
রহিল অনেক কাল সে স্থানে নৃপতি।

বঙ্গদেশ আমল করিতে হৈল মতি॥
বিশালগড় আদি করি পার্ব্বতীয় গ্রাম।
কালক্রমে সেই স্থান হৈল ত্রিপুর ধাম॥”

     রাজমালা—যুঝারফা খণ্ড

 উল্লিখিত বঙ্গবিজয়ের স্থতিরক্ষার্থে তৎকর্ত্তৃক ত্রিপুরাব্দ প্রচলিত হইয়াছিল বলিয়া অনুমিত হয়। অধুনা ১৩৩৭ ত্রিপুরাব্দ চলিতেছে। ত্রিপুরার সমস্ত রাজকার্য্যালয়ে এবং সর্ব্বসাধারণ-মধ্যে এই সন প্রচলিত।

 ত্রিপুরাধিপতি যুঝারফা ব্যতিরেকে তদীয় পরবর্ত্তী পঞ্চবিংশতিতম ত্রিপুরেশ “হরিরায়” বা “ডাঙ্গরফা” বর্ত্তমান ত্রিপুররাজ্যের পূর্ব্ব-দক্ষিণ দিগ্বর্ত্তী গোমতী নদীর উৎপত্তি স্থানের পর্ব্বতনিবাসী রিয়াংগণকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়া রাঙ্গামাটির পূর্ব্বদিকে রাজ্য বিস্তার করেন বলিয়া কথিত আছে।

 এতৎ প্রদেশস্থ পর্ব্বতনিবাসিগণ-মধ্যে এবংবিধ কিংবদন্তী প্রচলিত আছে—স্মরণাতীত কালে ত্রিপুররাজ্যের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তবর্ত্তী কোন এক মহীপের সহিত দাঙ্গাই নামক জনৈক ত্রিপুরেশের ঘোরতর সংগ্রাম হইয়াছিল। সেই মহাসমরে ত্রিপুরাধিপতি তদীয় প্রতিদ্বন্দী নৃপালকে সমর-প্রাঙ্গণে নিহত করিয়া তাঁহার রাজ্য অধিকার করেন।

 উক্ত সংগ্রামের প্রাক্কালেই জনৈক সৈনিক পুরুষের বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তৎপর দিবসেই তাহাকে যুদ্ধে যোগপ্রদান করিতে বাধ্য হওয়াতে বিবাহ রজনীতেই সেই নবদম্পতির চিরবিচ্ছেদ সঙঘটিত হইয়াছিল—এই রূপ এক প্রবাদ প্রচলিত আছে।

ত্রিপুরার স্মৃতি
৪১