পিলাক্-পাথর
ত্রিপুররাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তবত্তী “বিলোনিয়া” উপবিভাগে “পিলাক্-পাথর” নামে খ্যাত এক প্রাচীন গ্রাম আছে। এই জনপদ উক্ত রাজ্যের পুরাতন রাজধানী উদয়পুরের দক্ষিণ দিকে ন্যূনাতিরেক দ্বাদশ ক্রোশ দূরস্থ পর্ব্বতমালার বেষ্টনী-মধ্যে অবস্থিত।
উল্লিখিত গ্রামের উত্তর দিকে প্রবাহিত মুহরী নদীর সন্নিহিত বলিভীম নারায়ণের নামসমম্বিত একটী দীর্ঘিকা আছে। এই স্থান-নিবাসী জনসাধারণকর্ত্তৃক কথিত হয় যে, ত্রিপুরাধিপতি গোবিন্দ মাণিক্যের তনয় নৃপাল রাম মাণিক্যের শ্যালক বলিভীম নারায়ণ এই স্থানে বাস করিবার সময় দীর্ঘিকাটী খনন করাইয়াছিলেন।
খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে ত্রিপুরেশ রাম মাণিক্য মানবলীলা সংবরণ করিলে বলিভীম নারায়ণ—মৃত ত্রিপুরাধিপতির মহিষী তদীয় সহোদরার পুত্র পঞ্চ বর্ষ বয়স্ক বালক রত্ন মাণিক্যকে সিংহাসনে স্থাপন পূর্ব্বক রাজ্য শাসনভার স্বীয় হস্তে গ্রহণ করেন। এবম্প্রকারে তিনি ত্রিপুররাজ্যের সর্ব্বে-সর্ব্বা হইয়া রাজ্য শাসন পরিচালনায় প্রবৃত্ত হইলে সম্ভবতঃ প্রজাবৰ্গ তদীয় কার্ষ্যে বীতরাগ হইয়া রাজ্যমধ্যে নানারূপ উপদ্রব সৃষ্টি করিয়া থাকিবে। সেই কারণ বশতঃ তিনি তদানীন্তন ত্রিপুররাজধানী উদয়পুর পরিত্যাগ করিয়া এতদঞ্চলে আগমন পূর্ব্বক বাস স্থাপন করিয়াছিলেন।
পিলাক্-পাথর নামক এই জনপদ দুই ভাগে বিভক্ত। পূর্ব্বদিকের অংশ পূর্ব্ব পিলাক্ এবং অপরাংশ পশ্চিম পিলাক্ নামে জনসাধারণ-কর্ত্তৃক অভিহিত হয়। ঐ দুই স্থান ব্যাপী যে এক সুবিস্তীর্ণ জলাভূমি আছে, তন্মধ্যবর্ত্তী পূর্ব্ব পিলাকের পশ্চিম দেশস্থ “দেবদারু” বা “দেবারু” নামে খ্যাত এক অরণ্যাকীর্ণ বিশাল মৃণ্ময় স্তূপোপরি একটী অষ্টভূজা শক্তি দেবীর প্রতিমূর্ত্তি আজানু ভূমিতে প্রোথিত আছে। ইহার আয়তন জানু হইতে মস্তক পর্য্যন্ত প্রায় দুই হস্ত হইবে।
উক্ত জলাভূমির অন্তর্ব্বর্ত্তী “ঠাকুরাণী বাড়ী” নামে খ্যাত পশ্চিম পিলাকের এক মুক্তিকাস্তূপের পৃষ্ঠদেশস্থ অরণ্য-মধ্যে, একটী প্রস্তর-নির্ম্মিত চতুর্ভূজ ভগ্ন নৃসিংহমূর্ত্তি উত্তান ভাবে ভূলুণ্ঠিত রহিয়াছে। দৈর্ঘ্যে ইহা প্রায় দুই হস্ত হইবে। এই মূর্ত্তি হইতে অল্প দূরে, একটী ছাদ বিহীন বিধ্বস্ত ইষ্টকমন্দির-মধ্যে, ন্যূনকল্পে নয়