পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু অধিক টাকা আমার সঙ্গে নাই, অনুগ্রহ করিয়া ইহাই গ্ৰহণ করুন।” আমি টাকা লইলাম না। আমি বলিলাম,-“ব্ৰহ্মদেশে আমি কৰ্ম্ম করি। সেই স্থানের আমি সরকারী ডাক্তার। সেস্থানে লোকের বাটী। গিয়া ভিজিট গ্রহণ করি সত্য; কিন্তু এ স্থানে আমি টাকা লইব না। ছুটি লইয়া আমি দেশে আসিয়াছিলাম। কাৰ্যোপলক্ষে অল্পদিনের নিমিত্ত কাশী আসিয়াছি। এ স্থানে ডাক্তাৱী করিতে আমি আসি নাই। এ বালিকার অনুরোধে তোমাকে আমি দেখিতে আসিলাম। আমাকে টাকা দিতে হইবে না। তবে দুইদিন পরে আমি দেশে প্ৰতিগমন করিব। রামকমল ডাক্তারকে তোমার কথা বলিয়া যাইব । তাহাকে বোধ হয়, টাকা দিতে হইবে।” এই কথা বলিয়া আমি সে স্থান হইতে প্ৰস্থান করিলাম। টাকা লইলাম না বটে, কিন্তু বাবু যে ধন্যবান লোকের পুত্র, তাহা বুঝিতে পারিলাম। সামান্য লোকে একেবারে কুড়ি টাকা বাহির করিয়া দিতে পারে না। যতক্ষণ কুসীর নিকট ছিলাম, ততক্ষণ আমার মন ঠিক যেন কাদার ন্যায় কোমল ছিল! সেই মন লইয়া কুসী যাহা ইচ্ছা তাঁহাই করিতেছিল। কুসী যাহা আজ্ঞা করিতেছিল, তাঁহাই আমি স্বীকার করিতেছিলাম। কিন্তু যাই বাহিরে আসিলাম, আর আমার অন্তঃকরণ কঠিন ভাব ধারণ করিল। ক্ষুধায় পেট জুলিয়া উঠিল। শ্ৰান্তিজনিত দুৰ্ব্বলতা অনুভব করিতে লাগিলাম। মনে মনে বলিলাম,-“কি পাগল আমি যে, এই রাত্রিতে পুনরায় এতদূর আসিতে অঙ্গীকার করিয়া বসিলাম ।” যাহা হউক, যখন অঙ্গীকার করিয়াছি, তখন তাহাকরিতেই হইবে। পথে ডাক্তারখানা হইতে যথাপ্রয়োজন ঔষধ লইলাম। তাহার পর গ্ন বাসায় আসিয়া আহার করিলাম। আহার করিয়া পুনরায় সেই একক্রোশ পথ গিয়া ইহঁধ দিয়া আসিলাম। সে রাত্রিতে আর ঘরের ভিতর প্রবেশ করলাম না। দ্বারে কুসীকে ডাকিঃ পরদিন প্ৰাতঃকালে পুনরায় সেই বৃশ্বাসীর্ঘইলাম জুর হয় নাই। যুবাকাল। বাবু যে মুঞ্জ আরোগলাভ করতে পারবে, সম্পূর্ণ সেই সম্ভাবনা হইল । আমি আর দুইদিন কাশীতে রহিলাম। বাবু উঠিয়া বসিতে সমর্থ হইল। যাহা হউক, তবুও আমি রামকমল ডাক্তার মহাশয়কে বাবুর জন্য অনেক বলিয়া আসিলাম। বিদায় হইবার সময় বাৰু আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল। কুসী। আমার জন্য কঁদিতে লাগিল। আমি বলিলাম,-“কুসী। তোমাকে প্রথম দেখিয়াই আমার মনে এক অপূৰ্ব্ব স্নেহের উদয় হইয়াছিল! সেই অবধি তোমাকে আমি ঠিক আমার কন্যার মত স্নেহ করি। লোকে বলিয়া জানিও। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, জীবনে আর বোধ হয় তোমাদের সহিত আমার সাক্ষাৎ হইবে না।” কুসী। উত্তর করিল,—“আপনি মহাত্মা লোক। আমি আমার নিজের পিতাকে জানি না, তাহাকে কখন দেখি নাই। আমার বড় ভাগ্য যে, আজ আমি পিতা পাইলাম।” এই কথা বলিয়া কুসী চক্ষু মুছিতে লাগিল। তাহার পর নিতান্ত উৎসুক নেত্ৰে সে বাবুর পানে চাহিল। আমাকে তাঁহাদের নাম-ধাম প্ৰকাশ করিয়া বলে, কুসীর সেইরূপ ইচ্ছা। কিন্তু বাবু তাহাকে নিষেধ করিল। বাবু বলিল,-“কুসী! তাড়াতাড়ি করিও না। একটু অপেক্ষা কর। এখন পরিচয় দিয়া লাভ কি?” তাহার পর আমার দিকে দৃষ্টি করিয়া বাবু পুনরায় বলিল,— SS8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comাির্ড”*********