পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাল মহাশয় উত্তর করিলেন,- “সে অনেক কথা। বিস্তারিত বিবরণ প্ৰদান করিবার সময় নাই। আপাততঃ আমরা ঘোর বিপদে পড়িয়াছি। শীঘ্ৰ তাহার প্রতিকার না করিতে পারিলে, আমাদের সকর্ধনাশ হইবে।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “এই রাত্রি দুই প্ৰহরের সময় বিপদ কোথা হইতে আসিবো?” পাল মহাশয় উত্তর করিলেন,- “আমার পুত্রের নাম মিহির! মিহির এক খুনী মোকদ্দমায় পড়িয়াছে। দুই বৎসর পূৰ্ব্বে সে ঘটনা ঘটিয়াছে। মিহির সে লোককে খুন করে নাই; কিন্তু সমুদয় দোষটি তাহার ঘাড়ে পড়িয়াছে। সেজন্য এই দুই বৎসর নানারূপ ছদ্মবেশ ধারণ করিয়া, সে পথে পথে ফিরিতেছে। দুঃখের কথা বলিতে আমার বুক ফাটিয়া যায়, বাবা আমার কতই না কষ্টভোগ করিতেছে। ছদ্মবেশ ধারণ করিয়া রাত্রিকালে অতি গোপনে সে আমাদের সহিত সাক্ষাৎ করে। আমাদের নিকট আসিতে তাহাকে আমি বারবার মানা করিয়াছি। কিন্তু আমাকে, তাহার গর্ভধারিণীকে ও তাহার ভগিনীকে না দেখিয়া সে থাকিতে পারে না। কিছুদিন পূৰ্ব্বে রাত্রিকালে যখন সে অশ্বখগাছ দিয়া বাটীর ভিতর প্রবেশ করিতেছিল, সেই সময় তুমি তাহাকে দেখিয়াছিলে। পাছে কেহ সন্দেহ করে, সেজন্য আমার আজ্ঞায় আমার কন্যা তোমাকে সেই চিঠি লিখিয়াছিল। মিহির যদি আজ ধরা পড়ে, তাহা হইলে নিশ্চয় তাহার ফাঁসি হইবে। কারণ, সে যে খুন করে নাই, সে যে সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধ, তাহা প্রমাণ করিবার উপায় নাই। এ বিষয়ে যদি তুমি কোনওরূপ সহায়তা করিতে পাের, সেইজন্য তোমাকে ডাকিয়াছি। আমি তোমাকে ডাকিতে ইচ্ছা করি নাই। আমার গৃহিণী, আমার পুত্র ও আমার কন্যা, সকলের অনুরোধে আমি তোমাকে সামান্য একটি মুখস ও পরচুলের দাড়ি দেখিয়া তোমার যখন এত ভয়, তখন দ্বারা যে কোন উপকার হইবে, তাহা আমার বোধ হয় না। বরং আর একটু হইত্ত্বে ভয়ে চীৎকার ফরিয়া সৰ্ব্বনাশ করিতে! তােমার চীৎকারে পাড়ার লােক আমার বুড়ীড়ৈ তখন আর কোন উপায় থাকিত స్టో চাপিয়া ধরিতে আমরা বাধ্য হইয়াছিলাম।” পাল মহাশয়ের ভৎসনায় আমি অতিশয় লজ্জিত হইলাম। কিন্তু তাঁহার কন্যা যে আমাকে ডাকিবার নিমিত্ত অনুরোধ করিয়াছিল, সেজন্য আমার মন আনন্দে পরিপূর্ণ হইল। আপনাদিগকে পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে, আমি একজন বুদ্ধিমান লোক। এই প্রথম বুদ্ধিবলে ইঙ্গিতামাত্রে আমি সকল কথা বুঝিতে পারি। ইতিপূৰ্ব্বে আমি বলিয়াছিলাম যে, পাল মহাশয়ের কন্যা আমার রূপেগুণে মোহিত হইয়া, আমাকে বিবাহ করিতে লালায়িত হইয়াছে। কেমন! আমার কথা সত্য নয়? আমার বুদ্ধির প্রশংসা করিতে হয়। আর আমার সাহসেরও প্রশংসা করিতে হয়। পূৰ্ব্বে সাহসের অনেক পরিচয় দিয়াছি। এখন আমি ভাবিলাম যে, আরও বীরত্ব প্ৰদৰ্শন করিয়া এই কন্যার মন-প্ৰাণ আমি একেবারে কড়িয়া লাইব । এইরূপ ভাবিয়া তাহার কন্যার মুখপানে চাহিয়া আমি পাল মহাশয়কে বলিলাম,- “ঘরে তলোয়ার আছে? থাকে তো দিন, আমি লড়াই করিব।” পাল মহাশয় বিরক্ত হইয়া উত্তর করিলেন, — “তুমি পাগল না কি? কাহার সহিত তুমি লড়াই করিবে? পুলিশের সহিত লড়াই করিবে?” আমার ভয় হইল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “পুলিশ এ স্থানে কি করিয়া আসিবে? পুলিশ কি করিয়া জানিবে যে, আপনার পুত্র মিহির এ বাটীতে আসিয়াছে?” 86ጽ8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comাির্ড”********