পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিয়া ডাক দিবে। হলধর যদি উত্তর না প্ৰদান করে, তাহা হইলে গদাধরের বাড়ী যাইবে । গুণী ব্যক্তি এইরূপে সমস্ত রাত্রি লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরিবে। আতঙ্কে গ্রামবাসীদিগের মন কম্পিত হইল। কি উপায়ে এই বিষম বিপদ হইতে প্রাণরক্ষা করি, তাহা ভাবিয়া সমস্ত লোক ছেলেপুলে লইয়া প্ৰদীপ জ্বালাইয়া বসিয়া কাটাইল। গ্রামের লোক সতর্ক হইয়াছে, কেহই উত্তর দিবে না, এইরূপ ভাবিয়া বোধ হয় বড় বাড়ীর লোক নিশাজাগরণ করিতে আগমন করিল না। অতিকষ্টে গ্রামবাসীদিগের প্রাণরক্ষা হইল। রায়-গৃহিণীর কিন্তু কোন উপকার হইল না। কাশি, উদরাময় ও শোথ ব্যতীত তাঁহার শরীরের নানাস্থানে ক্ষত হইল। বড়ালমহাশয় ভাবিলেন যে, বিছানায় ক্রমাগত শয়ন করিয়া এইরূপ ক্ষত হইয়াছে। কিন্তু সে ক্ষত শুষ্ক হইল না। বড়াল মহাশয় হতাশ হইয়া পড়িলেন। অনেক ভাবিয়া-চিন্তিয়া অবশেষে তিনি কলিকাতা গমন করিলেন। সে স্থান হইতে ভাল একজন চিকিৎসক আনিলেন। ইনি পাশকরা ডাক্তার নহেন, ইহার বয়স অধিক হয় নাই। কিন্তু বড়ালমহাশয় সকলকে বলিলেন যে, চিকিৎসা সম্বন্ধে ইহার অসাধারণ ক্ষমতা। বাস্তবিক যেদিন হইতে ইনি চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন, সেদিন হইতে রোগিণী অনেকটা সুস্থ বোধ করিতে লাগিলেন। বড়ালমহাশয়, বড়ালমহাশয়ের স্ত্রী, ধনুকধারী ও নূতন চিকিৎসক, এই কয় ব্যক্তি ব্যতীত অন্য লোককে রোগিণী তাঁহার কাছে আসিতে দিতেন না। তিনি বলিতেন৷ “আমি দুৰ্ব্বল হইয়াছি, কথা কহিতে আমার কষ্ট বােধ হয়। পাঁচজনে আসিলেই দুই একটা কথা কহিতে হয়, তাহাতে আমার অসুখ বৃদ্ধি হয়। আমােৱ পীড়া হইয়াছে, ঘরে রথ-দোল হয় নাই যে, পুঞ্জ পুঞ্জ লোক দেখিতে আসিবে।” উপরি-উক্ত কয়জন রোগিণী সেবা করিতেন ৫ািতর্নি কেমন আছেন, সে সংবাদ বাহিরের লোক তাহদের নিকট হইতেই পাইত। দিনের পর দিন ধীরে ধীরে লাগিল। ১৫ই শ্রাবণ আসিল ও গেল, ১৬ই শ্রাবণ গেল আর গোটা কয়েক দিন হইলেই সকলের মনোবাঞ্ছা সিদ্ধ হয়। ১৮ই শ্রাবণ হইতে চিকিৎসক এক প্রকার নূতন ধরনের চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন। সেই চিকিৎসায় প্রতিদিন দুই মণ বরফের আবশ্যক। প্রতিদিন কলিকাতা হইতে দুই মণ বরফ আসিতে লাগিল। এই সময় বড়াল মহাশয় বিজয়বাবুকে পত্র লিখিলেন, “আপনার জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাইচরণ রায় মহাশয় কিরূপ উইল করিয়া গিয়াছেন, তাহা আপনি অবগত আছেন। আগামী ২০শে শ্রাবণ আপনার ভ্রাতৃজায়ার বয়ঃক্রম পঞ্চাশ বৎসর পূর্ণ হইবে। তাহার পরদিন অর্থাৎ ২১শে শ্রাবণ তিনি উইল করিবেন। পাছে পরে কোন আপত্তি হয়, সেজন্য রায় মহাশয় পূৰ্ব্ব হইতে আপনাকে সংবাদ দিতে বলিয়া গিয়াছেন। আপনি নিজে অথবা আপনার নিয়োজিত কোন লোক সেই সময় উপস্থিত থাকেন, আপনার ভ্রাতা সেইরূপ ইচ্ছা প্ৰকাশ করিয়াছিলেন। সেজন্য আপনাকে সংবাদ দিলাম।” ২০শে শ্রাবণ আসিল। রায়-গৃহিণীর বয়স পঞ্চাশ বৎসর হইল। আনন্দের আর সীমা রহিল। না। বড়ালমহাশয় ধুমধাম করিয়া গ্ৰাম্যদেবতার পূজা দিলেন। গ্রামের ব্ৰাহ্মণ ও অন্যান্য লোকদিগকে সমারোহের সহিত ভোজন করাইলেন। “এ আনন্দের দিন দিদিমণি তুমি আমাকে লইয়া গেলে না,” এই বলিয়া সুবালা খেদ করিয়া রায়-গৃহিণীকে পত্র লিখিলেন। কলিকাতা হইতে বিজয়বাবু নিজে আসিলেন না, আপনার উকীলকে পাঠাইয়া দিলেন। বড়ালমহাশয়কে তিনি লিখিলেন, “ঐ সম্পত্তিতে আমার প্রয়োজন নাই। বড় বধু-ঠাকুরাণী ዪኃግbr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comশ্মির্ত্যািক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ