পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“এ নিষ্ঠুর প্রস্তাবে প্রথম আমি সম্মত হই নাই; কিন্তু গুরুদেব নানা প্রকার শাস্ত্রের বচন বলিয়া আমাকে প্ৰবোধ দিলেন। তিনি বলিলেন,-স্বামী অপেক্ষা স্ত্রীলোকের আর প্রিয়বস্তু নাই। দাতাকৰ্ণ বা কি করিয়াছিলেন। তাহা অপেক্ষা স্বামী-বলি শতগুণ ফলপ্রদ। স্বয়ং ইন্দ্র স্বৰ্গ হইতে পুষ্পক রথ প্রেরণ করবেন। তাহাতে আরোহণ করিয়া আমরা তিনজনে স্বৰ্গে গমন করিব।” “গুরুদেব সকল বস্তুর আয়োজন করিলেন। যে ঔষধ আঘাণ করিলে লোক অচেতন হয়, প্রথম তিনি সেই ঔষধ সংগ্ৰহ করিলেন । শূলিনী দেবীকে বলি প্রদত্ত হইবে, সেজন্য শূলপ্রয়ােগে বধ করিতে হইবে। কাঠের বঁটি-সম্বলিত তীক্ষাগ্ৰ লীেহনিৰ্ম্মিত ছােট একটি শূল। তিনি গড়াইলেন। কাষ্ঠ হইতে প্ৰস্তৃত অনেকগুলি নিধুম কয়লা সংগ্ৰহ করিয়া তিনি এই খাটের নীচে লুক্কায়িত রাখিলেন। তিনি স্থির করিলেন যে, গভীর রাত্রিতে, তুমি রাজাবাবু, যখন নিদ্রিত থাকিবে, তখন ঔষধ আঘাণে তোমাকে অজ্ঞান করা হইবে; তাহার পর আমার এই ঘরে কয়লার আগুন করিয়া সেই অগ্নির উত্তাপে লৌহনিৰ্ম্মিত শূলকে রক্তবর্ণ করিতে হইবে। তিনি দিব। উত্তপ্ত শূল প্রয়োগে শরীরের ভিতর নাড়ীভূড় সমুদয় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও দগ্ধ হইয়া তৎক্ষণাৎ তােমার মৃত্যু হইবে। শরীরের বাহিরে কোনরূপ চিহ্ন থাকিবে না।” সোনা-বীে কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিলেন,- “ওঃ! কি নিষ্ঠুরতা! মনে করিতে গেলে আমার শরীর এখনও শিহরিয়া উঠে। রাজাবাবু! আমার ন্যায় পাপীয়সী রাক্ষসী পৃথিবীতে আর কে আছে? আমার মনে হয় যে, আমি মানবী নই, পিশাচী । ক্ষমা?- এ পাপের ক্ষমা নাই। রাজাবাবু। তোমার নিকট ক্ষমা চাইতেও 6वी६ श । "নির্দিষ্ট দিনে সমুদয় আয়ােজন হইল। ঘোর ৱিৰ্নিৰ্তে বাড়ীর লোক সকল যখন সুষুণ্ড হইল, তখন গুরুদেব জানালা-পথে নিঃশব্দে বাড়ীর র প্রবেশ করিলেন। তুমি রাজাবাবু, অঘোর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া ছিলে। একখানি ঔষধে সিক্ত করিয়া, তাহা দ্বারা তোমার মুখ ও নাসিকা আমরা চাপা দিলাম। হাত তুমি মুখ হইতে রুমাল দূর করিতে চেষ্টা করিলে। আমরা তোমার হাত ধরিয়া । তুমি পাশ ফিরিতে চেষ্টা করিলে। তাহাও আমরা বলপূৰ্ব্বক নিবারণ করিলাম। অবিলম্বে তুমি অজ্ঞান হইয়া পড়িলে। কয়লার আগুন করিয়া তাহার ভিতর লৌহশূল কিছুক্ষণের নিমিত্ত প্রবিষ্ট করিয়া রাখিলাম। উত্তাপে লোহিতবর্ণ হইয়া শূল গান গন করিতে লাগিল। সে সময় তাহার আকার সাক্ষাৎ যমস্বরূপ অতি ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিল। মন্ত্রপূত করিয়া গুরুদেব সেই শূল আমার হস্তে প্ৰদান করিলেন। মন্ত্র দ্বারা শূলিনী দেবীর তিনি আরাধনা করিতে লাগিলেন ও শূলপ্রয়ােগ করিবার নিমিত্ত বার বার তিনি আমাকে আদেশ করিতে লাগিলেন। কিন্তু সে নিষ্ঠুর কাজ করিতে আমি পারিলাম না। আমার হাত-পা কঁাপিতে লাগিল। হস্ত কম্পিত হইয়া রক্তবর্ণ শূল আমার পরিধেয় বস্ত্ৰে লাগিয়া গেল। কাপড় তৎক্ষণাৎ জুলিয়া উঠিল। আমি চীৎকার করিয়া উঠিলাম। সেই জ্বলন্ত কাপড় ও উত্তপ্ত শূল। ঘরের মাঝে ফেলিয়া আমি সে স্থান হইতে পলায়ন করিলাম।” বড়ালমহাশয় বিজয়বাবুকে চুপি চুপি বলিলেন,— “সে শূল আমি দেখিয়াছি। রাজাবাবু যখন বিদেশে গমন করিলেন, তখন তাঁহার চাকর বীরু সেই শূল সঙ্গে লইয়া গিয়াছিল। তা না হইলে আপনাকে আমি দেখাইতে পারিতাম।” সোনা-বেঁী বলিতে লাগিলেন,- “আমার চীৎকার শুনিয়া বীরু দৌড়িয়া আসিল । বড়ালমহাশয় আসিলেন। গুরুদেবকে বীরু ধরিয়া ফেলিল। তোমাকে সচেতন করিল। তাহার Գ8Ե দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comf"ঙলাকনাথ রচনাসংগ্ৰহ