আমি ত আর ঘরে টিকতে পারি নে। তার চেয়ে বরং স্পষ্ট বল, দাদা মেদিনীপুরে বদলী হয়েচেন, আমি মেয়ে নিয়ে চলে যাই-আমিও জুড়োই, তুমিও বঁাচ ! নরেন্দ্র অনেকক্ষণ ঘাড় হেঁট করিয়া মুখ তুলিয়া কহিল, এ-বেলায় ত হবে না, দেখি যদি ও-বেলায় কিছু যোগাড় করতে পারি। তার মানে ? যোগাড় না করতে পার, উপোস করতে হবে নাকি ? দেখ, কালই আমি মেদিনীপুরে যাব। কিন্তু তুমি এক কাজ কর। এই দালালী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে, দাদাকে ধরে একটা চাকরি যোগাড় করে নাও { তাতে বরঞ্চ ভবিষ্যতে থাকবে ভাল ; কিন্তু যা পার না ; তাতে হাত দিয়ে নিজেও মাটি হ’য়ে না, আমাকেও নষ্ট করে না । নরেন্দ্ৰ জবাব দিল না। ইন্দু আরও কি বলিতে যাইতেছিল ; কিন্তু এই সময় বেয়ারাটা শম্ভ বাবুর আগমন-সংবাদ জানাইল, এবং পরীক্ষণেই বাহিরে জুতার পদশব্দ শোনা গেল। ইন্দু পার্শ্বের দ্বার দিয়া পর্দার আড়ালে সরিয়া দাড়াইল । শম্ভ বাবু মহাজন। নরেন্দ্রর পিতা বিস্তর ঋণ করিয়া স্বগীয় হইয়াছেন । পুত্রের কাছে তাগাদা করিতে শস্তবাবু প্ৰায্যই শুভাগমন করিয়া থাকেন। আজিও উপস্থিত হইয়াছেন। তিনি মৃদুভাষী । আসন গ্ৰহণ করিয়া ধীরে ধীরে এমন গুটি-কয়েক কথা বলিলেন, যাহা দ্বিতীয়বার শুনিবার পূর্বে অতি-বড় নির্লজ্জ ও নিজের মাথাটা বিক্রয় করিয়া ফেলিতে দ্বিধা করিবেন না। শম্ভ বাবু প্ৰস্থান করিলে, ইন্দু আর একবার সুমুখে আসিয়া দাড়াইল। জিজ্ঞাসা করিল ইনি কে ? শম্ভ বাৰু। তার পরে ? কিছু টাকা পাবেন, তাই চাইতে এসেছিলেন। সে টের পেয়েচি । কিন্তু ধার করেছিলে কেন ? নরেন্দ্র এ প্রশ্নের জবাবটা একটু ঘুরাইয়া দিল। কহিল বাবা হঠাৎ মারা গেলেন, তাই
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০
অবয়ব