: সন্ধ্যার পর ইন্দুমতী বিশেষ একটু সাজ-সজ্জা করিয়া তাহার স্বামীর ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল, কি হচ্ছে ? নরেন্দ্র একখানি বাঙলা মাসিকপত্ৰ পড়িতেছিল ; মুখ তুলিয়া, নিঃশব্দে ক্ষণকাল স্ত্রীর মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া সেখানি হাতে তুলিয়া দিল । ইন্দু খোলা পাতাটার উপর চোখ বুলাইয়া লইয়া, জোড়া ভ্ৰ ঈষৎ কুঞ্চিত করিয়া বিস্ময় প্রকাশ করিল-ইস, এ যে কবিতা দেখছি! তা বেশ-বসে না থাকি, বেগার খাটি । দেখি এখানা কি কাগজ ? ‘সরস্বতী’ ? “স্বপ্ৰকাশ’ ছাপালে না বুঝি ? নরেন্দ্রের শান্ত দৃষ্টি ব্যথায় মান হইয়া আসিল! ইন্দু পুনরায় প্রশ্ন করিল, “স্বপ্ৰকাশ’ ফিরিয়ে দিলে ? সেখানে পাঠাইনি । পাঠিয়ে একবার দেখলে না কেন ? “স্বপ্ৰকাশ’ ‘সরস্বতী’’ নয়, তাদের কাণ্ডজ্ঞান আছে। এইজন্যেই আমি যা তা কাগজ কখখনো পড়ি নে । একটু হাসিয়া ইন্দু আবার কহিল, আচ্ছা, নিজের লেখা নিজেই খুব মন দিয়ে পড়। ভাল কথা,-আজি শনিবার, আমি ওঁ-বাড়ির ঠাকুরবিকে নিয়ে বায়স্কোপ দেখতে যাচ্ছি। কমলা ঘুমিয়ে পড়েচে ; কাব্যের ফঁাকে মেয়েটার দিকেও একটু নজর রেখো। চললুম। নরেন্দ্ৰ কাগজখানি বন্ধ করিয়া টেবিলের একাধারে রাখিয়া দিয়া বলিল, যাও ।
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩
অবয়ব