পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনে হয়। সবজের সমদ্ৰ গোটা দেশটা। আখাউড়া থেকে আগরতলা মাইল পাঁচ ছয় দরে। সবাধীন ত্রিপরার রাজধানী আগরতলা অনেকদিন ধরে দেখবার বড় শখ ছিল। আমি যে সমদ্রের কথা বলচি, তখন মোটর বাস হয়নি, আখাউড়া থেকে ঘোড়ার গাড়িতে আগরতলা গিয়ে পৌছলাম বেলা প্রায় দশটার সময়। কোথায় গিয়ে উঠবো কিছ ঠিক ছিল না, গাড়িতে একজন বলেছিল বিদেশী ভদ্রলোক গেলে মহারাজার অতিথিশালায় উঠতে পারে। আমার দেখবার ইচ্ছে হল ;. সে ব্যাপারটি কি রকম একবার দেখতে হবে। শািনলাম মহারাজের দপ্তরের কোনো একজন কম্পমচারীর সইকরা চিঠি ভিন্ন রাজার অতিথিশালায় থাকতে পারা যায় না . আমি রাজদপ্তরের কাউকে চিনতুম না, তবও সাহস করে গেলাম এবং কেশোরাম, পোহ্মদারের প্রদত্ত পরিচয়-পত্ৰ দেখিয়ে সেখান থেকে একখানা টিকিট যোগাড় করে। রাজার অতিথিশালায় এসে উঠলাম। অতিথিশালায় অনেকগলো ঘর, মালী বাঁশে ছাওয়া বেশ বড় বাংলো, দদিকে বড় বারান্দা, পেছন দিকে রান্নাঘর ও বাবচ্চিখানা। দরকম থাকার কারণ অতিথিরা, ইচ্ছামত ভারতীয় খাদ্য ও সাহেবী-খানা দরকমই খেতে পারেন। প্রত্যেক ঘরে কলকাতার মেসের মতো তিন চারটি খাট পাতা, তাতে শােধ গদি পাতা আছে. অতিথিরা নিজেদের বিছানা পেতে দেবেন। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা চমৎকার। সকালে চা, বিস্কুট, টােসিন্ট দেয়, দ পারে। ভাত, তিন-চারটি ব্যঞ্জন, মাছ, মাংস ও পোয়াটাক দধি, রাত্রে অতিথির ইচ্ছামত ভাত বা রাটি। শীতকালে ব্যবহারের জন্যে গরম জল দেওয়ার বলেন্দাবসন্ত আছে। যে ক-জন চাকরিবােকর আছে, তারা সব্বদা তটস্থ, মাখের কথা বার করতে দেরি সয় না, তখনি সে কাজ করবে। তিনদিন এখানে থাকবার ব্যবস্থা আছে স্টেটের খরচে-তারপর থাকতে হলে অনািমতি-পত্রের মেয়াদ বাড়িয়ে আনতে হয় রাজদপ্তর। থেকে । প্রকৃতপক্ষে অনেকে সাতদিন আটদিন কি তার ৰেশিও থাকে, চাকরিবাকিরদের কিছ দিলে তারাই ওসব করে নিয়ে এসে দেবে। আমি গিয়ে দেখি অত বড় বাংলোতে একজন মাত্র সঙ্গী-আর কোনো অতিথি তখন নেই। জিজ্ঞেস করে জানলাম। তিনি প্রায় মাসখানেকের বেশি আছেন রাজ অতিথিরাপে। ইনি অদভুত ধরনের মানষ—একাধারে ভবঘরে দার্শনিক, কবি ও भाइँठेनिश् ७aर्थ्रोिन्मशान्न । অনেক দিন হয়ে গেলেও এই ভদ্রলোকের কথা আমার অতি সম্পন্ট মনে আছে : আমার বইগলির দ্য একটি চরিত্রের মলেও ইনি প্রচ্ছন্নভাবে বত্তমান। পরে এর কথা আরও বলচি । আগরতলা ছোট শহর, রাজপথে বেজায় ধলো, ঘরবাড়িগলোও দেখতে ভালো প্রাসাদ, ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানার কয়েকটি বন্যজন্তু, কুঞ্জবন প্রাসাদ ও বড় একটা ফলের বাগান। আর ভালো লেগেছিল সলেখক ও সপন্ডিত কনেল মহিমচন্দ্র দেব বম্পমানকে। ইনি মহারাজের জ্ঞাতি ও খািল্লতাত, রাজদপ্তরে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সে সময়ে, বৌদ্ধদৰ্শন ও ইতিহাসে তাঁর যথেষ্ট পড়ােশানো। অত্যন্ত অমায়িক ভদ্রলোক, যখন আমি তাঁর বাড়ি দেখা করতে গিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে, তখন আমি তরুণবয়স্ক, তাঁর বয়স ছিল পঞ্চান্ন বৎসরের কাছাকাছি-কিন্তু আমার সঙ্গে সমবয়সী। & R