পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবরাত্রির কাব্য 8 ܘ ܠ সে তা যাচাই করবে ? আনন্দকে সে যে স্তরে পেয়েছে সেখানে ওর অনিয়ম নিয়ম, ওর অসঙ্গতিই সঙ্গতি । ওর অনিবাৰ্য্য আকর্ষণ ছাড়া বিশ্বজগতে আজ আর দ্বিতীয় সত্য নেই ; ওর হৃদয়মনের সহস্ৰ পরিচয় সহস্রবার আবিষ্কার করে তার লাভৃ কি হবে ? তার মোহকে সে চরম পরিপূর্ণতার স্তরে তুলে দিয়েছে, তাকে আবার গোড়া থেকে সুরু করে বাস্তবতার ধাপে ধাপে চিনে গিয়ে তিল তিল করে মুগ্ধ হবার মানে কি হয় ? এ তারই হৃদয়মনের দুর্বলতা । ঈশ্বরকে কৃপাময় বলে কল্পনা না করে যে দুর্বলতার জন্য মানুষ ঈশ্বরকে ভালবাসতে পারে না, এ, সেই দুৰ্বলতা। আনন্দকে আশ্রয় করে যে অপার্থিব অবোধ্য অনুভূতি নীহারিকালোকের রহস্য-সম্পদে তার চেতনাকে পৰ্য্যন্ত আচ্ছন্ন করে দিতে চায়, পৃথিবীর মাটিতে প্রোথিত সহস্ৰ শিকড়ের বন্ধন থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে উৰ্দ্ধােয়তঃ জ্যোতিস্তরের মত তাকে উত্তঙ্গ আত্মপ্রকাশে সমাহিত করে ফেলতে চায়, সেই অব্যক্ত অনুভূতিকে ধারণ করবার শক্তি হৃদয়ের নেই বলে অভিজ্ঞতার অসংখ্য অনভিব্যক্তি দিয়ে তাকেই সে আয়ত্ত করবার চেষ্টা করছে। আকাশকুসুমকে আকাশে উঠে সে। চয়ন করতে পারে না । তাই অসীম ধৈৰ্য্যের সঙ্গে বাগানের মাটিতে তার চাষ করছে। হৃদয়ের একটিমাত্র অবাস্তব বন্ধনের সমকক্ষ লক্ষ বাস্তব বন্ধন সৃষ্টি করে সে আনন্দকে বঁধতে চায়। সুখদুঃখের অতীত উপভোগকে সে পরিণত করতে চায় তার পরিচিত পালক-বেদনায় ! আজ সন্ধ্যা থেকে সে এই অসাধ্য সাধনে ব্ৰতী হয়েছে। আনন্দ পুরাতন প্রশ্ন করল। “কি ভাবছেন ?”