পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হত, তবে আমাদের কোন বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন হত না। কিন্তু এই যুদ্ধ উপলক্ষে বৃটিশ আমাদের দেশে এক বিরাট সেনাবাহিনী তৈরী করেছে। তাছাড়া, তারা সারা পৃথিবী থেকে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী, অস্ত্রশস্ত্র এবং সমর-সজ্জা এনেছে—ইংল্যাণ্ড থেকে, আমেরিকা থেকে, বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এবং নেপাল থেকে। একদা সর্ব্বশক্তিমান বৃটিশরা ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছে। সেই জন্যে আমাদেরও জাপানের সাহায্য নিতে হয়েছে। ভারতের বৃটিশ বাহিনী তার যুদ্ধ-পূর্ব্ব অবস্থায় ফিরে যাক; আমিও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, জাপানের সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য ছাড়াও আমরা ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদ সাধন করতে পারব। আর বৃটিশরা যদি মহাত্মা গান্ধীর “ভারত ছাড়ো” প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, একটি জাপানী সৈন্যও ভবিষ্যতে ভারতের মাটিতে পদার্পণ করবে না, এবং যে সব জাপানী সৈন্য ইতিমধ্যেই ভারতে পৌঁছেচে তারা সানন্দে এখনই ভারত ছেড়ে চলে আসবে।

 আমাদের সমগ্র অভিযান কৌশলের বর্ণনা দিয়ে, এবার আমি প্রকাশ করব, চূড়ান্ত বিজয় সম্বন্ধে আমি কেন এত আস্থাশীল—

 ১। আমি দেখছি ইতিহাসের বিধান অনুসারে বৃটিশ সাম্রাজ্য এখন ক্ষয়িষ্ণু। কোন প্রকার কৃত্রিম উত্তেজক দ্রব্যের দ্বারা—যেমন আমেরিকান সাহায্যের দ্বারা—তাকে আর পূর্ব্বেকার যৌবন এবং গৌরবের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না।

 কিন্তু ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্য অকস্মাৎ মরে না। মৃত্যু যখন এগিয়ে আসে, তখনও সংগ্রাম চলে—মৃত্যুর কাছে শেষ আত্মসমর্পণের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত সময় সময় সে সংগ্রাম অতি কঠিনও হয়। এই জন্যেই বৃটিশরা এখনও যুদ্ধ করছে এবং ভবিষ্যতে পতনের পূর্বে তারা কঠিন সংগ্রাম করবে।

১০১