পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছি। পৃথিবীর সর্ব্বত্র বিপ্লবীবাহিনীকে আমাদের মতো অবস্থাতেই যুদ্ধ করতে হয়—কিন্তু তারা শেষ পর্য্যন্ত বিজয়ী হয়। বিয়ার এবং রাম, টিনজাত শূকর-মাংস এবং গো-মাংস থেকে তাদের শক্তি আসে না, তাদের শক্তি আসে বিশ্বাস এবং আত্মত্যাগ থেকে—সাহস এবং সহিষ্ণুতা থেকে। আজাদ-হিন্দ ফৌজ বৃটিশ-বাহিনীর মতো নয়। চূড়ান্ত রকমের কষ্ট এবং অসুবিধার মধ্যে যুদ্ধ করার জন্যে আজাদ-হিন্দ ফৌজকে গড়ে তোলা হয়েছে। যাদের মুক্তির জন্যে তারা সংগ্রাম করছে, সেই বিশ কোটি আশি লক্ষ লোকের স্বার্থকে তারা কখনও ডুবিয়ে দেবে না।

 মণিপুর এবং উত্তর-পূর্ব্ব আসামের সামরিক গুরুত্ব এত বেশী যে, বৃটিশরা সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই দৃঢ় প্রতিরোধ করবে। উভয় পক্ষই জানে যে, মণিপুর মুক্ত হলেই বৃটিশদের একটা বিরাট অঞ্চল ছেড়ে বহু দূর পশ্চাদপসরণ করতে হবে। কিন্তু আমরা ভারতের অভ্যন্তরে অভিযান-পরিচালনায় অভিজ্ঞতার পূর্ণতম ব্যবহার করছি। দীর্ঘস্থায়ী কঠিন সংগ্রাম আমাদের উদ্দেশ্যের পক্ষে মঙ্গলজনক—কেন না একমাত্র এই পথেই নতুন বিপ্লবী বাহিনী এবং তার অফিসারদের শিক্ষা লাভ সম্পূর্ণ হতে পারে। আমরা শুধু এখন ভারতকে মুক্ত করলেই কাজ ফুরিয়ে যাবে না,—আমাদের সেনাবাহিনী, অফিসার এবং সেনাপতি তৈরী করতে হবে—যারা ভবিষ্যতে সব সময়ের জন্যে ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে। কাজেই, এখন মণিপুরে এবং আসামে যা ঘটছে তা আমাদের মঙ্গলের জন্যেই।

 ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, সে যুদ্ধ বৃটেন ও আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ নয়—এ ভারতের নিজেরই মুক্তি-সংগ্রাম। সেই জন্যেই অমরা অধৈর্য্য কিংবা দুর্ব্বল হয়ে পড়িনি। মণিপুর থেকে দিল্লী অনেক দূর। কাজেই রাজধানীতে ত্রিবর্ণ-রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করতে পারার পূর্ব্বে আমরা পুরো দুটি বৎসর যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। আমরা জানি,

১০৪