পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সােভিয়েট গবর্নমেণ্টের রাজনৈতিক অভিযানে আদৌ সন্তুষ্ট নয়। উদাহরণ স্বরূপ উত্তর-আফ্রিকা, সিরিয়া, মিসর ও ইরানের নাম করা যায়। তাছাড়া, পােল্যাণ্ড, ফিনল্যাণ্ড, বাল্টিক ও বল্কান রাজ্যসমূহ এবং দার্দ্দনলেস প্রণালীতে সােভিয়েট গবর্নমেণ্টের যে মনোগত অভিপ্রায়, তাকেও ইঙ্গ-মার্কিণরা আনুকূল্যের চোখে দেখে না। ১৯১২ অব্দে বল্কান-শক্তিপুঞ্জ যখন তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তখন তাদের মধ্যে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, মিত্রপক্ষীয় শিবিরেও অনুরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব একেবারে অসম্ভব নয়। ১৯৩৯-এর সীমান্ত অতিক্রম করে সােভিয়েট-বাহিনীর অগ্রগতি যদি কখনও সম্ভব হয়, তবে তার ফলে অপ্রত্যাশিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইঙ্গ-মার্কিণ শক্তিদ্বয় ও সােভিয়েটের মধ্যে যে বােঝাপড়ার অভাব ও সংঘাত আছে তা তখন আরও বেড়ে যাবে।

 এর ফলে আমরা তুরস্ক সমস্যার মধ্যে এসে পড়ি। বৃটিশ প্রচারকরা বিশ্ববাসীর মনে এই ধারণা সৃষ্টি করার প্রয়াস পাচ্ছে যে, এমন দিন আসবে যখন তুরস্ক মিত্রশক্তিদের পক্ষে যােগ দেবে। এই প্রচারকরা ভাবে, এই ধরণের প্রচারকার্য্য বৃটিশ-সমর্থনে ভারতীয় মুসলমানদের প্রভাবিত করবে। কিন্তু আধুনিক তুরস্ক সম্বন্ধে যার কিছুমাত্র জ্ঞান আছে, সে এই ধরণের অভিমতে আদৌ বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে না। তুরস্কে যদিও এমন সব উপদল আছে যারা স্পষ্টতঃ মিত্রপক্ষের সমর্থক এবং যদিও আঙ্কারার বেতার-কেন্দ্রের সুরও মিত্রপক্ষ সমর্থন করছে, তবু যুদ্ধরত উভয় পক্ষের কোনদিকেই তুরস্কের যােগদানের সম্ভাবনা নেই।

 আমি প্রথমেই বলেছি, মিত্রপক্ষীয় শিবিরে মনােবল কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানাের জন্যে প্রচারকরা আমেরিকার যুদ্ধ-পণ্যোৎপাদনের প্রাচুর্য্য নিয়ে খুব হৈ চৈ করেছে। কিন্তু আমেরিকার পণ্যোৎপাদন ইতিমধ্যেই সর্ব্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেচে, এবং ভবিষ্যতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না

৭৯