পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হতে পারে যদি জার্ম্মান-মনােবলের আকস্মিক অধঃপতন ঘটে—যেমন বিগত যুদ্ধে হয়েছিল। কিন্তু তার কোন লক্ষণই আমি দেখছি না। মার্শাল ষ্টালিন যেমন রাশিয়ায় সমস্ত প্রতিরােধের অবসান করেছিলেন, ফুয়েরারও তেমনি জার্ম্মানীর অভ্যন্তরে সমস্ত প্রতিরোধ ধ্বংস করে আগে থেকেই এ সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ করছেন।

 ইউরােপের এ যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধই হবে না, হবে স্নায়ুর যুদ্ধও। পক্ষের মনােবল বেশী থাকবে সেই পক্ষই জিতবে—এবং সে হচ্ছে জার্ম্মান পক্ষ। নিছক ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ইউরােপের দীর্ঘ যুদ্ধ আমাদের পক্ষে এই অর্থে উপকারী হবে যে, এর ফলে মিত্রপক্ষীয় সেনা সেখানে আটক পড়ে থাকবে। ইঙ্গ-মার্কিণরা ইউরােপ মহাদেশকে যদি না ঘাঁটাত এবং তারা যদি ইটালী ও ফ্রান্সে সৈন্যাবতারণ না করত, তবে তারা ভারতে এবং পূর্ব্ব-এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে তাদের স্থল-সৈন্য ও নৌ-সৈন্য নিয়ােগ করতে পারত। কাজেই, ইউরােপে ইঙ্গ-মার্কিণদের বর্ত্তমান অভিযান আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে প্রত্যক্ষ সাহায্যের মতই।

 ভারতীয় পরিস্থিতি ইউরােপীর পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল নয়। ভবিষ্যতে ইউরােপে যা-ই ঘটুক না কেন, ভারতীয় জনগণ আজ স্বাধীনতা-অর্জ্জনের দৈবপ্রেরিত সুযােগ পেয়েছে। কাজেই, ইউরােপীয় পরিস্থিতি যদিও আমাদের ঔৎসুক্যের বিষয় হয়ে থাকবে, তবু সেখানে কি ঘটবে না ঘটবে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানাের বিশেষ প্রয়ােজন নেই। মুক্তি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে। আসুন, সুযােগ থাকতে থাকতে আমরা তাকে মুঠো করে ধরি। লােহা গরম থাকতে থাকতেই তার উপর আঘাত করতে হবে।

 বেতার-বক্তৃতা: ৮ই জুলাই, ১৯৪৪

৮১