পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* মা বললেন-দেখায়াৱে ? ? . -ওই কাট রোতের ধাৱে বেড়াতে গিয়ে এক জায়গায় বসেছিলাম, তাই দেখলাম আকাশের গায়ে একটা নদী-আমাদের মত ছোট নদী নয়-সে খুব বড়, কত গাছপালাদেখনি মা ? -দূৱ পাগলা-ও মেঘ, বিকেলে ওরকম দেখায়। --না মা, মেঘ নয়, মেঘ আমি চিনিনে ? ও আর একটা দেশের মত, তাদের লোকজন পষ্ট দেখেচিৰে-তুমি দেখনি কখনও ? ジー -আমার ওসব দেখবার সময় নেই, ঘরকন্ন। তাই ঠেলে উঠতে পারিনে, নিতুটার আবার আজ প’ড়ে পা ভেঙে গিয়েচে-আমার মরবার অবসর নেই-ও-সব তুমি দেখগে दद । বুঝলাম মা আমার কথা আবিশ্বাস করলেন। সীতাকেও একবার বলেছিলাম-সে কথাটা বুঝতেই পারলে না। দাদাকে কখনো কিছু বলিনি। আমার মনে অনেকদিন ধ’রে এটা একটা গোপন রহস্যের মত ছিল-যেন আমার একটা কি কঠিন রোগ হয়েছে--সেটা যাদের কাছে বলছি, কেউ বুঝতে পারছে না, ধরতে পারছে না, সবাই হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে। এখন আমার সয়ে গিয়েছে। বুঝতে পেরেছি-৪ সবাই দেখে না-যারা দেখে, চুপ ক’রে থাকাই তাদের পক্ষে সব চেয়ে ভালো।. আমাদের বাসা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সব সময়ই চোখে পড়ে । জ্ঞান হয়ে পৰ্য্যন্ত দেখে আসচি বহুদূৱ দিকচক্রবালের এ-প্ৰান্ত থেকে ও-প্ৰান্ত পৰ্যন্ত তুষারমেলি গিরিচুড়ার সারি।-- বাগানের চারিধারের পাহাড়শ্রেণীর যেন একটুখানি ওপরে বলে মনে হ’ত-তুৰ্থনো পৰ্যন্ত বুঝিনি যে, ওগুলো কত উচু। কাঞ্চনজঙ্ঘা নামটা অনেকদিন পৰ্যন্ত জানতাম না, আমাদের চাকর খাপকে জিজ্ঞেস করলে বলত, ও সিকিমের পাহাড়। সেবার বাবা আমাদের সবাইকে ( সীতা বাদে ) দাৰ্জিলিং নিয়ে গিয়েছিলেন বেড়াতে-বাবার পরিচিত এক হিন্দুস্থানী চায়ের এজেণ্ট ওখানে থাকে, তার বাসায় গিয়ে দু-দিন আমরা মহা আদর-যত্নে কাটিয়েছিলাম--তখন বাবার মুখে প্ৰথম শুনবার সুযোগ হ’ল যে ওর নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। সীতার সেবার যাওয়া হয়নি, ওকে সাত্মনা দেবার জন্যে বাবা বাজার থেকে ওর জন্যে রঙীন গার্টার, উল আর উল বুনবার কাটা কিনে এনেছিলেন । এই কাঞ্চনজঙ্ঘার সম্পর্কে আমার একটা অদ্ভূত অভিজ্ঞতা আছে।••• সেদিনটা আমাদের বাগানের কলকাতা আপিসের বড় সাহেব আসবেন বাগান দেখতে। তঁর নাম লিটন লাহেব । বাবা ও ছোট সাহেব তাকে আনতে গিয়েচেন সোনায়া স্টেশনে —আমাদের বাগান থেকে প্রায় তিন-চার ঘন্টার পথ। ঘোড়া ও কুলী সঙ্গে গিয়েছে।