পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

এজন্য একটু সকাল সকাল শয্যা আশ্রয় করিয়াছেন। আপনি ফিরিয়া আসিলেই তাঁকে সংবাদ দেওয়ার ভারটা আমার উপর দিয়াছেন বলিয়াই, আমি এখনও জাগিয়া আছি।”

 নবাব সুজা বেগ, কি একটা ভাবিয়া লইয়া বলিলেন— “যখন বেগমের তবিয়ৎ ভাল নয়, তখন তাঁহাকে জাগাইবার কোন প্রয়োজন নাই। আজ আমারও বড় ক্লান্তি বোধ হইতেছে এজন্য আমিও একটু নির্জ্জনে থাকিতে চাই। যাও—তুমি শয়ন করগে। রাত প্রায় একটা বাজে।”

 জুমেলি কোন কিছু বলিবার পূর্ব্বেই, নবাব সুজা বেগ চিন্তাকাতর হৃদয়ে, নিজের কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া, দ্বার বন্ধ করিয়া দিলেন। তাঁহার মনে একটা দারুণ অশান্তি জাগিয়া উঠিয়াছে।

 নবাব সুজা বেগ,নিদ্রাহীন নেত্রে, চঞ্চলহৃদয়ে সেই কক্ষমধ্যে পদচারণা করিতে লাগিলেন। সবুজ বর্ণের সামাদানের মধ্যে কয়েকটী স্নিগ্ধ সুগন্ধি বর্ত্তিকা কাঁপিয়া কাঁপিয়া জ্বলিতেছিল ঐ কম্পন, ঠিক যেন তাঁহার হৃৎপিণ্ডের তৎসাময়িক দ্রুত স্পন্দনের অনুরূপ। কি একটা দারুণ দুশ্চিন্তায় তাঁহার মুখ অতি মলিন। বাদশাহী বিলাসভোগ, উৎকষ্ট ও দুষ্প্রাপ্য ইস্পাহানী সেরাজি, তাঁহার চিত্তে যে একটা প্রসন্ন ভাব আনিয়া দিয়াছিল, দারুণ দুশ্চিন্তার ফলে তাহাতে একটা অবসন্নভাব আসিল। তিনি চঞ্চল হৃদয়ে শয্যাশ্রয় করিলেন।

 কিন্তু সে শয্যা যেন অনলকণাময়। ইস্তাম্বুলের সুগন্ধ সেই শয্যার উপাধানে ও আস্তরণে। কিন্তু তাহা হইতে যেন

১৩৭