পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 আনার শশব্যস্তে, চকিতনেত্রে, সেই কক্ষের চারিদিকে চাহিয়া বলিল—“কৈ—কেউ তো এখানে নাই প্রিয়তম!”

 সুজা খাঁ আবার ভয়ে চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন “ঐ—ঐ—বাহারবানু! সে প্রথম চেষ্টায় আমায় হত্যা করিতে পারে নাই বলিয়া, আবার ছুরি লইয়া মারিতে আসিতেছে! ঐ—সে! ঐ আবার আমার বুকে ছুরি বসাইয়া দিল! আনার! আনার! রক্ষা কর। বাঁচাও—আমাকে! প্রতিশোধ লওয়া হলোনা!”

 এই উত্তেজনার বিরামে নবাবের আর বাক্য স্ফুর্ত্তি হইল না। সমস্ত দেহ সহসা হিমাঙ্গ হইয়া পড়িল। নবাব সুজা খাঁ, শয্যায় ঢলিয়া পড়িয়া, জন্মের মত নীরব হইলেন। সব ফুরাইল! সেই স্নিগ্ধ প্রভাত বায়ুতে—তাঁহার জ্বালাময় শেষ নিঃশ্বাস মিশিল!

 ঠিক এই সময়ে, কে একজন সেই কক্ষের দ্বার ঠেলিয়া ভিতরে আসিয়া বলিল— “নবাব! তোমার শেষ ইচ্ছা আমি পূর্ণ করিয়াছি। আনার! আনার! এই নাও সেই শোণিতাক্ত ছুরিকা! এই ছুরিকায় যে উজ্জল শোণিত কলঙ্ক দেখিতেছ, তাহা নবারের আর সেই শয়তানী বাহারবানুর! এই নাও তোমার রত্নহার! তোমার পথের কণ্টক সরাইবার জন্য তোমারই কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়া গিয়াছিলাম। কাল সন্ধ্যার সময়, যখন তোমার কাছে আসি—তখন তুমিই কাঁদিতে কাঁদিতে আমার হাতে ধরিয়া অনুরোধ করিয়াছিলে, নবাব একাকী আরামবাগে গিয়াছেন। যে উপায়ে পার, নবাবকে বাঁচাও। কিন্তু নবাবকে ত বাঁচাইতে পারিলাম না! হায়! আনার! এক মুহুর্ত্ত আগে যদি

১৮৯