o বয়স্তা। রকম দেখিয়া পলায়ন করিলাম । প্র । তার পর ? বয়স্তা। রাজমহিষী কিছু গহনা দিয়াছিলেন, গহনা সমেত পলাইয়াছিলাম। স্বতরাং ডাকাইতের হাতে পড়িলাম। সে ডাকাইতের দলপতি ভবানী ঠাকুর, তিনি আমার কাহিনী শুনিয়া আমার গহনা লইলেন না, বরং আরও কিছু দিলেন। আপনার গৃহে আমায় আশ্রয় দিলেন । আমি র্তাহার কন্যা, তিনি আমার পিতা । তিনিও আমাকে এক প্রকার সম্প্রদান করিয়াছেন। প্র । এক প্রকার কি ? বয়স্তা। সৰ্ব্বস্ব শ্রীকৃষ্ণে । প্র । সে কি রকম ? বয়স্তা। রূপ, যৌবন, প্রাণ । প্র । তিনিই তোমার স্বামী ? বয়স্তা। হা-কেন না, যিনি সম্পূর্ণরূপে আমাতে অধিকারী, তিনিই আমার স্বামী। প্রফুল্ল দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিল, “বলিতে পারি না। কখন স্বামী দেখ নাই, তাই বলিতেছ—স্বামী দেখিলে কখন শ্রীকৃষ্ণে মন উঠিত না।” মূখ ব্ৰজেশ্বর এত জানিত না। বয়স্তা বলিল, “শ্রীকৃষ্ণে সকল মেয়েরই মন উঠিতে পারে ; কেন না, তার রূপ অনন্ত, যৌবন অনন্ত, ঐশ্বৰ্য্য অনন্ত, গুণ অনন্ত ।” এ যুবতী ভবানী ঠাকুরের চেল, কিন্তু প্রফুল্ল নিরক্ষর—এ কথার উত্তর দিতে পারিল না। হিন্দুধৰ্ম্মপণে ভাবা উত্তর জানিতেন। ঈশ্বর অনন্ত জানি। কিন্তু অনন্তকে ক্ষুদ্র হৃদয়পিঞ্জরে পূরিতে পারি না। সান্তকে পারি। তাই অনন্ত জগদীশ্বর, হিন্দুর হৃৎপিঞ্জরে সান্ত শ্ৰীকৃষ্ণ ! স্বামী আরও পরিষ্কাররূপে সান্ত । এই জন্য প্রেম পবিত্র হইলে, স্বামী ঈশ্বরে আরোহণের প্রথম সোপান। তাই হিন্দুর মেয়ের পতিই দেবতা। অন্য সব সমাজ, হিন্দুসমাজের কাছে এ অংশে নিকৃষ্ট । প্রফুল্ল মূর্থ মেয়ে, কিছু বুঝিতে পারিল না। বলিল, “আমি অত কথা ভাই, বুঝিতে পারি না । তোমার নামটি কি, এখনও ত বলিলে না ?” বয়স্তা বলিল, “ভবানী ঠাকুর নাম রাখিয়াছেন নিশি, আমি দিবার বহিন নিশি। দিবাকে এক দিন আলাপ করিতে লইয়া আসিব । কিন্তু যা বলিতেছিলাম, শোন। ঈশ্বরই
পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৩
অবয়ব