করিতে হইবে। যখন উভয়ে পরস্পরবিরোধী হইবে, তখন কোন দিক গুরু ভাহাই । দেখিবে। আত্মরক্ষা, স্বজনরক্ষা, দেশরক্ষা—জগৎরক্ষার জষ্ঠ প্রয়োজনীয়, অতএব সেই দিক্ অবলম্বনীয়। কিন্তু বস্তুতঃ জাগতিক প্রীতির সঙ্গে, আত্মপ্রতি বা স্বজনপ্রীতি বা দেশপ্রীতির কোন ৷ বিরোধ নাই। যে আক্রমণকারী তাহা হইতে আত্মরক্ষা করিব, কিন্তু তাহার প্রতি ঐতিশুষ্ক কেন হইব ? ক্ষুধার্ত চোরের উদাহরণের দ্বারা ইহা তোমাকে পূর্বে বুঝাইয়াছি। আর ইহাও বুঝাইয়াছি যে, জাগতিক প্রীতি এবং সৰ্ব্বত্র সমদর্শনের এমন তাৎপৰ্য্য নহে যে, পড়িয়া মার খাইতে হইবে। ইহার তাৎপৰ্য্য এই যে, যখন সকলেই আমার তুল্য, তখন আমি কখন কাহারও অনিষ্ট করিব না। কোন মনুষ্যেরও করিব না এবং কোন সমাজেরও করিব না। আপনার সমাজের যেমন সাধ্যানুসারে ইষ্টসাধন করিব, সাধ্যানুসারে পর-সমাজেরও তেমনি ইষ্টসাধন করিব । সাধ্যানুসারে, কেন না কোন সমাজের অনিষ্ট করিয়া অন্য কোন সমাজের ইষ্টসাধন করিব না। পর-সমাজের অনিষ্ট সাধন করিয়া, আমার সমাজের ইষ্টসাধন করিব না, এবং আমার সমাজের অনিষ্টসাধন করিয়া কাহারেও আপনার সমাজের ইষ্টসাধন করিতে দিব না । ইহাই যথার্থ সমদর্শন এবং ইহাই জাগতিক প্রীতি ও দেশপ্রীতির সামঞ্জস্য। কয় দিন পূর্বে তুমি যে প্রশ্ন করিয়াছিলে, এক্ষণে তাহার উত্তর পাইলে । বোধ করি তোমার মনে ইউরোপীয় Patriotism ধৰ্ম্মের কথা জাগিতেছিল, তাই তুমি এ প্রশ্ন করিয়াছিলে। আমি তোমাকে যে দেশগ্ৰীতি বুঝাইলাম, তাহ ইউরোপীয় Patriotism নহে । ềūzāfstą Patriotism একটা ঘোরতর পৈশাচিক পাপ । ইউরোপীয় Patriotism ধর্মের তাৎপৰ্য্য এই যে, পর-সমাজের কাড়িয় ঘরের সমাজে আনিব। স্বদেশের শ্ৰীবৃদ্ধি করিব, কিন্তু অন্ত সমস্ত জাতির সর্বনাশ করিয়। তাহা করিতে হইবে। - এই দুরন্ত Patriotism প্রভাবে আমেরিকার আদিম জাতিসকল পৃথিবী হইতে বিলুপ্ত হইল। জগদীশ্বর ভারতবর্ষে যেন ভারতবর্ষীয়ের কপালে এরূপ দেশবাৎসল্য ধৰ্ম্ম না লিখেন। এখন বল, প্রীতিতত্ত্বের স্থূল তত্ত্ব কি বুঝিলে ?
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪২
অবয়ব