وهذ মস্তিষ্ক, হৃৎ, বায়ুকোষ, অস্ত্র প্রভৃতি জীবনসঞ্চালক প্রত্যঙ্গ ; অস্থি, মজ, মেদ, মাংস, শোণিত প্রভৃতি শারীরিক উপাদান, এবং স্কুৎপিপাসাদি শারীরিক বৃত্তি। এ সকলের বিহিত পরিণতি চাই। আর মনেরও কতকগুলি প্রত্যঙ্গ— শিষ্য। মনের কথা পশ্চাৎ শুনিব ; এখন শারীরিক পরিণতি ভাল করিয়া বুঝান । শারীরিক প্রত্যঙ্গ সকলের কি প্রকারে পরিণতি সাধিত হইবে ? শিশুর এই ক্ষুদ্র দুর্বল বাহু বয়োগুণে আপনিই বৰ্দ্ধিত ও বলশালী হইবে । তাহা ছাড়া আবার কি চাই ? গুরু। তুমি যে স্বাভাবিক পরিণতির কথা বলিতেছ, তাহার দুইটি কারণ। আমিও সেই দুইটির উপর নির্ভর করিতেছি। সেই দুইটি কারণ পোষণ ও পরিচালনা। তুমি কোন শিশুর একটি বাহু, কঁাধের কাছে দৃঢ় বন্ধনীর দ্বারা বাধিয়া রাখ, বাহুতে আর রক্ত ন। যাইতে পারে। তাহা হইলে, ঐ বাহু আর বাড়িবে না, হয়ত অবশ, নয় তুৰ্ব্বল ও অকৰ্ম্মণ্য হইয়ু যাইবে। কেন না, যে শোণিতে বাহুর পুষ্টি হইত, তাহ আর পাইবে না। আবার, বাধিয়া কাজ নাই, কিন্তু এমন কোন বন্দোবস্ত কর যে, শিশু কখনও আর হাত নাড়িতে ন পারে। তাহ হইলে ঐ হাত অবশ ও অকৰ্ম্মণ্য হইয়া যাইবে, অন্ততঃ হস্ত সঞ্চালনে যে ক্ষিপ্রকারিত। জৈবকার্য্যে প্রয়োজনীয়, তাহ। কখনও হইবে না। উৰ্দ্ধবাহুদিগের বাছ দেখিয়াছ ত ? শিষ্য। বুঝিলাম, অমুশীলন গুণে শিশুর কোমল ক্ষুদ্র বাহু পরিণতবয়স্ক মামুষের বাস্থর বিস্তার, বল ও ক্ষিপ্রকারিত প্রাপ্ত হয় । কিন্তু এ ত সকলেরই সহজেই হয়। আর কি চাই । গুরু। তোমার বাহুর সঙ্গে এই বাগানের মালীর বাহু তুলনা করিয়া দেখ। তুমি তোমার বাহুস্থিত অঙ্গুলিগুলিকে অমুশীলনে এরূপ পরিণতু করিয়াছ যে, এখনই পাঁচ মিনিটে তুমি দুই পৃষ্ঠা কাগজে লিখিয়া ফেলিবে, কিন্তু ঐ মালী দশ দিন চেষ্টা করিয়া তোমার মত একটি “ক” লিখিতে পারিবে না। তুমি যে না ভাবিয়া, না যত্ন করিয়া অবহেলায় যেখানে যে আকারের যে অক্ষরের প্রয়োজন তাহ লিখিয়া যাইতেছ, ইহা উহার পক্ষে অতিশয় বিস্ময়কর, ভাবিয়া সে কিছু বুঝিতে পারে না। সচরাচর অনেকেই লিখিতে জানে, এই জস্য সভ্য সমাজে লিপিবিদ্যা বিস্ময়কর অনুশীলন বলিয়া লোকের বোধ হয় না। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই লিপিবিদ্যা ভোজবাজির অপেক্ষ আশ্চৰ্য্য অনুশীলনফল । দেখ, একটি শব্দ লিখিতে গেলে, মনে কর এই অমুশীলন শব্দ লিখিতে গেলে,—প্রথমে এই শব্দটির বিশ্লেষণ করিয়া উহার উপাদানভূত বর্ণগুলি স্থির করিতে হইবে—বিশ্লেষণে পাইতে
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৪
অবয়ব