দশম অধ্যায়।—মনুষ্যে ভক্তি। শিষ্য। মুখ, সকল বৃত্তিগুলির সম্যক ফুৰ্ত্তি, পরিণতি, সামঞ্জস্য এবং চরিতার্থতা। বৃত্তিগুলির সম্যক্ ক্ষুৰ্ত্তি, পরিণতি এবং সামঞ্জস্তে মনুষ্যত্ব। বৃত্তিগুলি, শারীরিক, জ্ঞানার্জনী, কাৰ্য্যকারিণী এবং চিত্তরঞ্জিনী। ইহার মধ্যে শারীরিক ও জ্ঞানার্জনী বৃত্তির অনুশীলনপ্ৰথা সম্বন্ধে কিছু উপদেশ প্রাপ্ত হইয়াছি। নিকৃষ্টা কাৰ্য্যকারিণী বৃত্তিগুলির অনুশীলন কি, সামঞ্জস্য বুঝিবার সময়ে, ভয়, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদির উদাহরণে বুঝিয়াছি। নিকৃষ্ট কার্যাকারিণী বৃত্তি সম্বন্ধে, বোধ করি, আপনার আর কোন বিশেষ উপদেশ নাই, তাহাও বুঝিয়াছি। কিন্তু অনুশীলনতত্ত্বের এ সকল ত সামান্ত অংশ। অবশিষ্ট যাহা শ্ৰোতব্য তাহা শুনিতে ইচ্ছা করি। গুরু। এক্ষণে যাহাকে কাৰ্য্যকারিণী বৃত্তিগুলির মধ্যে সচরাচর উৎকৃষ্ট বলে, তাদৃশ বৃত্তির কথা বলিব। বৃত্তির মধ্যে যে অর্থে উৎকর্ষ নিকর্ষ নির্দেশ করা যায়, সেই অর্থে এই তিনটি বৃত্তি সর্বশ্রেষ্ঠ—ভক্তি প্রতি দয়া । শিয়। ভক্তি, প্রতি, দয়া, এ তিনটি কি একই বৃত্তি নহে? প্রতি ঈশ্বরে ন্যস্ত হইলেই সে ভক্তি হইল, এবং আর্জে হ্যস্ত হইলেই তাহা দয়া হইল । গুরু। যদি এরূপ বলিতে চাও, তাহাতে আমার এখন কোন আপত্তি নাই ; কিন্তু অনুশীলন জন্য তিনটিকে পৃথক বিবেচনা করাই ভাল। বিশেষ, ঈশ্বরে ন্যস্ত যে প্রতি সেই ভক্তি, এমন নহে। ময়ূন্য-যথ রাজা, গুরু, পিতা মাতা, স্বামী প্রভৃতিও ভক্তির পাত্র। আর ঈশ্বরে ভক্তি না হইয়াও কেবল প্রতি জন্মিতে পারে। তাই, বাঙ্গালার বৈষ্ণবেরা, শাস্তু, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, এবং মধুর, ঈশ্বরের প্রতি এই পঞ্চবিধ অনুরাগ স্বীকার করেন। সে পাচটি দেখিবে, এই ভক্তি, প্রীতি, দয়া মাত্র। তবে কোন ভাবটি মিশ্র কোনটি অমিশ্র, यथt-- শাস্ত (সাধারণ ভক্তের যে ভাব)= ভক্তি । দাস্য ( হনুমদাদির যে ভাব )= ভক্তি + দয়া । সখ্য ( শ্ৰীদামাদির যে ভাব )=ঐতি। বাৎসল্য (নন্দ যশোদা )= প্রীতি+দয়া। মধুর (রাধা )= ভক্তি+ঐতি+দয়া।
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৪
অবয়ব