সপ্তদশ অধ্যায় –ভক্তি। - যে দিন ইউরোপীয় বিজ্ঞান ও শিল্প, এবং ভারতবর্ষের এই নিষ্কাম ধর্শ একত্রিত , সেই দিন মন্থন্ত দেবতা হইবে। তখন ঐ বিজ্ঞান ও শিল্পের নিষ্কাম প্রয়োগ ভিন্ন সকাম প্রয়োগ হইবে না। - শিষ্য। মানুষের অদৃষ্টে কি এমন দিন ঘটিবে ? গুরু। তোমরা ভারতবাসী, তোমরা করিলেই হইবে। দুই-ই তোমাদের হাতে। এখন ইচ্ছা করিলে তোমরাই পৃথিবীর কর্তা ও নেতা হইতে পার। সে আশা যদি তোমাদের না থাকে, তবে বৃথায় আমি বকিয়া মরিতেছি। যে যাহা হউক, এক্ষণে এই গীতোক্ত সন্ন্যাসবাদের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য কি ! প্রকৃত তাৎপৰ্য্য এই যে, কৰ্ম্মহীন সন্ন্যাস, নিকৃষ্ট সন্ন্যাস। কৰ্ম্ম, বুঝাইয়াছি—ভক্ত্যাত্মক। অতএব এই গীতোক্ত সন্ন্যাসবাদের তাৎপৰ্য্য এই যে, ভক্তাত্মক কৰ্ম্মযুক্ত সন্ন্যাসই যথার্থ সন্ন্যাস। সপ্তদশ অধ্যায়।—ভক্তি। ধ্যান বিজ্ঞানাদি । গুরু। ভগবদগীত। পাচ অধ্যায়ের কথা তোমাকে বুঝাইয়াছি। প্রথম অধ্যায়ে সৈন্যদর্শন, দ্বিতীয়ে জ্ঞানযোগের স্থলাভাস, উহার নাম সাংখ্যযোগ, তৃতীয়ে কৰ্ম্মযোগ, চতুর্থে জ্ঞান-কৰ্ম্ম-হাসযোগ, পঞ্চমে সন্ন্যাসযোগ, এ সকল তোমাকে বুঝাইয়াছি। ষষ্ঠে ধ্যানযোগ। ধ্যান জ্ঞানবাদীর অনুষ্ঠান, সুতরাং উহার পৃথক আলোচনার প্রয়োজন নাই। যে ধ্যানমার্গাবলম্বী, সে যোগী। যোগী কে, তাহার লক্ষণ এই অধ্যায়ে বিবৃত হইয়াছে। যে অবস্থায় চিত্ত যোগামুষ্ঠান দ্বারা নিরুদ্ধ হইয়া উপরত হয় ; যে অবস্থায় বিশুদ্ধান্তঃকরণের দ্বারা আত্মাকে অবলোকন করিয়া আত্মাতেই পরিতৃপ্ত হয় ; যে অবস্থায় বুদ্ধিমাত্রলোভ, অতীন্দ্রিয়, আত্যন্তিক সুখ উপলব্ধ হয় ; যে অবস্থায় অবস্থান করিলে আত্মতত্ত্ব হইতে পরিচ্যুত হইতে হয় না ; যে অবস্থা লাভ করিলে, অন্য লাভকে অধিক বলিয়া বোধ হয় না, এবং যে অবস্থা উপস্থিত হইলে গুরুতর দুঃখও বিচলিত করিতে পারে না, সেই অবস্থার নামই যোগ—নহিলে খাওয়া ছাড়িয়া বার বৎসর একঠাই বসিয়া চোক বুজিয়া ভাবিলে যোগ হয় না। কিন্তু যোগীর মধ্যেও প্রধান ভক্ত— যোগিনামপি সৰ্ব্বেষাং মদগতেনান্তরাত্মন । শ্রদ্ধাবান ভজতে যো মাং স মে যুক্ততমো মত: । ৬। ৪৭ ৷
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৫
অবয়ব