গোকুলবাবু চলে যাবার কিছু দিন পরেই সুকুমারী একবারে শয্যা নিলে। কোনও রকমে তিন সপ্তাহ কেটে গেল। তার পর একদিন সন্ধ্যার সময় তার বোধ হল, দম বন্ধ হয়ে আসছে, ঘরে হারিকেন লণ্ঠন জ্বলছে অথচ সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। খোকা পাশেই শুয়ে আছে। তার মাথায় হাত দিয়ে সুকুমারী মনে মনে বললে, মা জগদম্বা, আমি তো চলে যাচ্ছি, আমার ছেলেকে কে দেখবে? হে মা ষষ্ঠী, দয়া কর, দয়া কর, আমার খোকাকে রক্ষা কর।
সহসা ঘর আলো করে ষষ্ঠীদেবী সুকুমারীর সামনে আবির্ভূত হলেন। মধুর স্বরে প্রশ্ন করলেন, কি চাও বাছা?
সুকুমারী বললে, আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে মা। শুনেছি তোমার ইচ্ছায় সন্তান জন্মায়, তোমার দয়াতেই বাঁচে, যিনি সর্বভূতে মাতৃরূপে থাকেন তুমিই সেই দেবী। মা গো, আমি যাচ্ছি, আমার ছেলেটাকে দেখো।
সকুমারীর কপালে পদ্মহস্ত বুলিয়ে দেবী বললেন, তোমার ছেলের ব্যবস্থা আমি করছি, তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমও। সুকুমারী ঘুমিয়ে পড়ল।
ষষ্ঠীদেবী ডাকলেন, মেনী।
একটি প্রকাণ্ড বেরাল সামনে এল। ধপধপে সাদা গা, মাথার লোম কাল, মাঝে সরু সিঁথি, ল্যাজে সারি সারি চুড়ির মতন দাগ। পিছনের দু পায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দু পা জোড় করে মেনী বললে, কি আজ্ঞা করছেন মা?
—তুই এই খোকার ভার নে।
—আমি যে বেরাল মা!
—তুই মানুষ হয়ে যা।