পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ধুস্তুরী মায়া

বিবৃত করছি। কিন্তু শ‍ুধু এই খবরটি শুনলে চলবে না, রামধন দাসের ইতিহাস গোড়া থেকে জানা দরকার।


বি.এ. পাস করার পর রামধন একজন বড় প্রকাশকের অফিসে চাকরি নিয়েছিলেন। মনিবের ফরমাশে তিনি কতকগুলি শিশ‍ুপাঠ্য পুস্তক লেখেন, যেমন ছেলেদের গীতা, ছোটদের বেদান্ত, কচিদের ভারতচন্দ্র, খোকাবাবুর গুপ্তকথা, খুকুমণির আত্মচরিত, ইত্যাদি। বইগুলি সস্তা সচিত্র আর প্রাইজ দেবার উপযুক্ত, সেজন্য কাটতি ভালই হল। একদিন রামধন এক বিখ্যাত প্রবীণ সাহিত্যিকের কাছে শুনলেন, গল্প রচনা খুব সোজা কাজ। সাহিত্যে কালোবাজার নেই, কিন্তু চোরাবাজার অবারিত। বাঙালী লেখক ইংরিজী থেকে চুরি করে, হিন্দী লেখক বাংলা থেকে চুরি করে, এই হল দস্তুর। কথাটি রামধনের মনে লাগল। তিনি দেদার বিলিতী আর মার্কিন ডিটেকটিভ গল্প আত্মসাৎ করে বই লিখতে লাগলেন। খদ্দেরের অভাব হল না, তাঁর মনিবও তাঁকে লাভের মোটা অংশ দিলেন। কিন্তু রামধন দেখলেন, তাঁর রোজগার ক্রমশ বাড়লেও উচ্চ সমাজে তাঁর খ্যাতি হচ্ছে না। মোটর ড্রাইভার, কারিগর, টিকিটবাবু, বকাট ছোকরা, আর অল্পশিক্ষিত চাকরিজীবীই তাঁর বইএর পাঠক। পত্রিকাওয়ালারা বিজ্ঞাপন ছাপেন কিন্তু সমালোচনা প্রকাশ করতে রাজী হন না। বলেন, এ হল নীচু দরের সাহিত্য, এর সমালোচনা ছাপলে পত্রিকার জাত যাবে। রামধন মনে মনে বললেন, বটে! আমার রোমাঞ্চ-লহরীকে হরিজন-সাহিত্য ঠাউরেছ? প্রেমের প্যাঁচ চাও, মনস্তত্ত্ব চাও, যৌন আবেদন চাও? আচ্ছা, আমার শক্তি শীঘ্রই দেখতে পাবে।