পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লক্ষ্মীর বাহন
৭৩

নিমন্ত্রণে যাবার সময় এক গা ভারী ভারী গহনা আর ন্যাফথালিনবাসিত বেনারসী পরেন। তিনি স্বামীর সব কাজের খবর রাখেন এবং ধনবদ্ধি আর পাপক্ষয় যাতে সমান তালে চলে সে বিষয়ে সতর্ক থাকেন। মুচুকুন্দ যদি অর্থের জন্য কোনও কুকর্ম করেন তবে মাতঙ্গী বাধা দেন না, কিন্তু পাপ খণ্ডনের জন্য স্বামীকে গঙ্গাস্নান করিয়ে আনেন, তেমন তেমন হলে স্বস্ত্যয়ন আর ব্রাহ্মণভোজনও করান। মুচুকুন্দর অট্টালিকায় বার মাসে তের পার্বণ হয়, পুরুত ঠাকুরের জিম্মায় গৃহদেবতা নারায়ণশিলাও আছেন। কিন্তু মাতঙ্গীর সব চেয়ে ভক্তি লক্ষ্মীদেবীর উপর। তাঁর পূজোর ঘরটি বেশ বড়, মারবেলের মেঝে, দেওয়ালে নকশা-কাটা মিনটন টালি, লক্ষ্মীর চৌকির উপর আলপনাটি একজন বিখ্যাত চিত্রকরের আঁকা। ঘরের চারিদিকের দেওয়ালে অনেক দেবদেবীর ছবি ঝুলছে এবং উঁচু বেদীর উপর একটি রূপোর তৈরী মাদ্রাজী লক্ষীমূর্তি আছে। মাতঙ্গী রোজ এই ঘরে পূজো করেন, বৃহস্পতিবারে একটু ঘটা করে করেন। সম্প্রতি তাঁর স্বামীর কারবার তেমন ভাল চলছে না সেজন্য মাতঙ্গী পূজোর আড়ম্বর বাড়িয়ে দিয়েছেন।


জ কোজাগর পূর্ণিমা, মুচুকুন্দ সব কাজ ছেড়ে দিয়ে সহধর্মিণীর সঙ্গে ব্রতপালন করছেন। সমস্ত রাত দুজনে লক্ষ্মীর ঘরে থাকবেন, মাতঙ্গী মোটেই ঘুমুবেন না, স্বামীকেও কড়া কফি আর চুরুট খাইয়ে জাগিয়ে রাখবেন। শাস্ত্রমতে এই রাত্রে জুয়া খেলতে হয় সেজন্য মাতঙ্গী পাশা খেলার সরঞ্জাম আর বাজি রাখবার জন্য শ-খানিক টাকা নিয়ে বসেছেন। মুচুকুন্দ নিতান্ত অনিচ্ছায় পাশা খেলছেন, ঘন ঘন হাই তুলছেন আর মাঝে মাঝে কফি খাচ্ছেন।