পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
ধুস্তুরী মায়া

 রাত বারটার সময় পূর্ণিমার চাঁদ আকাশের মাথার উপর উঠল। ঘরে পাঁচটা ঘিএর প্রদীপ জ্বলছে এবং খোলা জানালা দিয়ে প্রচুর জ্যোৎস্না আসছে। মুচুকুন্দ আর মাতঙ্গী দেখলেন, জানালার বাইরে একটা বড় পাখি নিঃশব্দে ঘরে ঘরে উড়ে বেড়াচ্ছে, তার ডানায় চাঁদের আলো পড়ে ঝকমক করে উঠছে। মাতঙ্গী জিজ্ঞাসা করলেন, কি পাখি ওটা? মুচুকুন্দ বললেন, পেঁচা মনে হচ্ছে। পাখিটা হঠাৎ হুহু-হুম হুহু-হুম শব্দ করে ঘরে ঢুকে লক্ষ্মীর মূর্তির নীচে স্থির হয়ে বসল। মুচুকুন্দ তাড়াতে যাচ্ছিলেন, মাতঙ্গী তাঁকে থামিয়ে চুপি চুপি বললেন, খবরদার, অমন কাজ ক’রো না, দেখছ না মা-লক্ষ্মীর বাহন এসেছেন। এই বলে তিনি গলবস্ত্র হয়ে প্রণাম করলেন, তাঁর দেখাদেখি মুচুকুন্দও করলেন। পেঁচা মাথা নেড়ে মাঝে মাঝে হুহু হুম শব্দ করতে লাগল।

 লক্ষ্মী পেঁচা তাতে সন্দেহ নেই, কারণ মুখটি সাদা, পিঠে সাদার উপর ঘোর খয়েরী রঙের ছিট। কাল পেঁচা নয়, কুটুরে পেঁচা নয়, হুতুমও নয়, যদিও আওয়াজ কতকটা সেই রকম। পেঁচার ডাক সম্বন্ধে পণ্ডিতগণের মতভেদ আছে। সংস্কৃতে বলে ঘুৎকার, ইংরেজীতে বলে হূট। শেকস্পীয়ার লিখেছেন, টু টুইট টু হু। মদনমোহন তর্কালংকার তাঁর শিশুশিক্ষায় লিখেছেন, ছোট ছেলের কান্নার মতন। যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি মহাশয়ের মতে কাল পেঁচা কুক-কুক-কুক অথবা করুণ শব্দ করে, কুটুরে পেচা কেচা-কেচা-কেচা রব করে, হুতুম পেঁচা হুউম হুউম করে। লক্ষ্মী পেচার বুলি তিনি লেখেন নি। মুচুকুন্দর গৃহাগত পেঁচাটির ডাক শুনে মনে হয় যেন দেওয়ালের ফুটো দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বইছে।

 মাতঙ্গী একটি রূপোর রেকাবিতে কিছু লক্ষ্মীপূজোর প্রসাদ রেখে পেঁচাকে নিবেদন করলেন। অনেকক্ষণ নিরীক্ষণ করে পেঁচা