নববিধান 88 এবং ইতিমধ্যেই উভয়ের মধ্যে একপ্ৰকার রফা হইয়া গিয়াছে। দেখিয়া সে তৃপ্তি বোধ করিল ; কহিল, কই সোমেনকে আনতে ত লোক পাঠালে না বিভা ? বিভা কি একটা বলিতে যাইতেছিল, ক্ষেত্ৰমোহন কহিলেন, হাতী যে কিনছিল সে নেই। তার মানে ? ক্ষেত্রমোহন বলিলেন, তুমি গল্প শোনোনি ? কে একজন মাতাল নাকি নেশার বেঁকে রাজার হাতী, কিনতে চেয়েছিল । পরদিন তাকে ধরে এনে এই বেয়াদপির কৈফিয়ৎ চাওয়ায় সে হাত জোড় করে বলেছিল, হাতীতে আর তার প্রয়োজন নেই, কারণ হাতীর যে সত্যিকাবের খরিদার সে আর নেই, চলে গেছে । এই বলিয়া তিনি নিজেব রসিকতায় হাসিতে লাগিলেন, এবং পরে হাসি থামিলে বলিলেন, এই গল্পটা শুনিয়ে বৌঠাকরুণকে রাগ করতে বারণ ক’রো শৈলেশ, সত্যিকবি খদের আর নেই-সে চলে গেছে । মায়ের চেয়ে পিসীর কাছে এসে যদি ছেলে বেশী মানুষ হয়, তার চেয়ে না হয় ধার-ধোর করে বিভাকে একটা হাতীই আমি কিনে দেবো। —এই বলিয়া তিনি বিভার অলক্ষ্যে মুখ টিপিয়া পুনরায় হাসিতে লাগিলেন। কিন্তু সে-হাসিতে শৈলেশ যোগ দিল না, এবং পাছে পরিহাসের সূত্র ধরিয়া বিভার ক্ৰোধ উজ্জীবিত হইয়া উঠে, এই ভয়ে সে। প্ৰাণপণে আপনাকে সম্বরণ করিয়া নীরব হইয়া রহিল । ক্ষেত্ৰমোহন লজিত হইয়া কহিলেন, ব্যাপার কি শৈলেশ ? শৈলেশ কহিল, বিভার কথায় সোমেনের সম্বন্ধে আমি অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম, কিন্তু সে যখন হবে না। তখন আবার কোন একটা নুতন ব্যবস্থা আমাকে করতেই হবে। ক্ষেত্ৰমোহন কহিলেন অর্থাৎ ডাইনীর হাতে ছেলে বিশ্বাস করা যায় না-না ?
পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৯
অবয়ব