পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
১৭

কথাটা হঠাৎ যেন কাহিনীর মত বলিয়া মনে হইল। আছি আমরা কোথায় নীচে পড়িয়া!— এত উঁচুতে উঠিবই বা কি করিয়া?

 Tender এ পার হইয়া দেখি যে, শাদা শাদা “পনি” জোতা ছোট ছোট শতাবধি দুই চাকার টম্ টম গাড়ী (Dogcart) রহিয়াছে; প্রত্যেক গাড়ীতে দুই জনের বেশী ধরে না। আমরা দুই বঙ্গনারী, আমাদের নম্বরমত একখানি গাড়ী দখল করিয়া বসিলাম। ভ্রাতার ভাগ্যে এক স্থবিরা শেতাঙ্গিনী সহযাত্রী জুটিলেন; দেখিয়া সকলেই খুব আমোদ করিতে লাগিলাম। অশ্বচালক ঘোড়ার মুখ ধরিয়া গাড়ী টানিয়া লইয়া চলিল, কেন না আজকার চড়াই বড় সঙ্কটজনক। যখন সারি বাঁধিয়া এতগুলি গাড়ী অগ্রসর হইতে লাগিল, তখন মনে হইল, যেন সুধা-সংগ্রহে নিমন্ত্রিত হইয়া, মর্ত্ত্যধামবাসী আমরা সুরলোকে গমন করিতেছি তবে, সে কামচারী রথও নাই, আর সে সারপিও সঙ্গে নাই; থাকার মধ্যে আছে, ‘কুক্ কোম্পানী’র জনৈক শ্বেতকায় মাংসল ম্যানেজার তিনিই এ ক্ষেত্রে আমাদের পথপ্রদর্শক! তা দেখা যাউক, পাশ্চাত্য প্রণালীমতে দিব্যধামে প্রবেশলাভের কি প্রকার ধারা!

 উপত্যকার মধ্য দিয়া প্রথমে যখন অগ্রসর হইতে লাগিলাম, চতুর্দ্দিক হইতে, হুলু ধ্বনির মত, কুলু কুলু রব কর্ণকুহরে যেন অমৃতধারা বর্ষণ করিতে লাগিল। ভাবিলাম, এই বুঝি আমাদের যাত্রার মঙ্গলাচরণ! কিন্তু এ কুলবধূগণ যে আগন্তুক দেখিয়াও অবগুণ্ঠনে মুখ লুক্কায়িত করিতেছেন না!—এটা বুঝি দেশাচারের ফল!—অধিকন্তু, কেমন হাসিয়া হাসিয়া অঞ্চল উড়াইয়া অগ্রবর্ত্তী হইয়া চলিয়াছেন। তবে, এ বিলাস-বিলোল মূর্ত্তি দেখিয়া আমাদের সহযাত্রী পাশ্চাত্যপ্রদেশবাসিগণের “অন্তরে গুমরি মরে বাসনা যত”-ভাবটা কিছুমাত্রও দেখিতে পাইলাম না! তাহার অর্থ আর কিছুই নয়— পাশ্চাত্যদেশবাসীদিগের ভাবে ও স্বভাবে, আর আমাদের ভাবে ও স্বভাবে স্বর্গমর্ত্তপ্রভেদ।—অধিকন্তু, এতদ্দেশীয় পাণ্ডা ও যাত্রিগণ, আমাদের ধারণা-মত স্থান-অস্থান, সময়-অসময়, পাত্র-অপাত্র বুঝিয়া ত চলে না—চলিতে পারে না: সুতরাং, আমাদিগকেই বিশেষ বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হইতেছে।—আমরা কি তাহাদের মত হাসি-কান্না হাতের মুঠায় রাখিতে জানি? কখন্ কোন্ ভাবের আবেগে আমাদের প্রাণ বিগলিত হইয়া নয়ন-পথে ধারারূপে বাহির হইয়া পড়ে, আমরা কি তাহা রোধ করিতে পারি? না, জানি?—না, আমরা তাহার জন্য দায়ী? কাজেই এই পর্য্যটকের দলে মিশিয়া অবধি পোড়া চক্ষু দুটি লইয়া সর্ব্বদাই যেন ভয়ে ভয়ে আছি, পাছে হাস্যাস্পদ