পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
নরওয়ে ভ্রমণ

দুস্তর রাস্তা জানিলে কি আর দ্বীপদর্শনে আসি! বাসীন্দারা কেমন খোস্‌মেজাজে চলিয়াছে! দেখিয়া হিংসা হইল। মনে ভাবিলাম, বিধাতাপুরুষ যদি অন্ততঃ দণ্ড দুইএর জন্যেও এদের মত আমাদের ঘ্রাণ এবং দৃষ্টি শক্তিকে একটু মন্দীভূত করিয়া দিতেন, তবে এযাত্রা বাঁচিয়া যাইতাম। কিন্তু যা হইবার নয়, তা ভাবিয়া ফল কি?

 এই ভাবে যথাস্থানে আসিয়া খেয়া-ঘাটে ছোট ছোট Tender বাঁধা আছে দেখিলাম। ওপারে একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ দেখা যাইতেছে, সেইটিই আমাদের গন্তব্য স্থান। শুনিলাম, সেখানে শুধু সহস্রাধিক ধীবরের বাস। অন্য আর কোন জাতির বসতি আর নাই। একটু অগ্রসর হইতেই মৎস্যজীবীদের নৌকার মাস্তুল সকল দেখা যাইতে লাগিল। আমরাও উদগ্রীব হইয়া সেই স্থলখণ্ডে পৌছিবার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। কিন্তু জলপথের দূরত্ব নির্ণয় করা বড়ই দুরূহ ব্যাপার। জলতত্ত্ববিদ ভিন্ন ইহা সহজ লোকের চক্ষুকে সততই বিড়ম্বিত করে। ক্রমে মাস্তুল সহ তরীসকলের সন্ধান মিলিল। তাহার পর মানবদেহসমূহ দৃষ্টিগোচর হইতে লাগিল। অনন্তর কুলে আসিয়া আমাদের জলযান ভিড়িল। তীরে শিশুর দল মহা কলরব উপস্থিত করিল। সঙ্গে দুইচার জন নবীনা চকিত নেত্রে আমাদিগকে সাদরসম্ভাষণ জানাইয়া, তাহাদের চিরন্তন ব্যবসার কিছু মুনফা করিবার আশায় আমাদিগের হস্তে বহুবিধ পোষ্টকার্ড চাপাইয়া দিল। দুই একজন আবার দুচার কথা ইংরেজীও বলিতে লাগিল; তা শুনিয়া আমরাও কিছু উত্তর দিতে প্রবৃত্ত হইলাম। কিন্তু এদের এ বিদেশী ভাষার বিদ্যাটা বেশী দূর গড়াইল না দেখিয়া, বাধ্য হইয়া, বাগ্‌দেবীকে বিদায় দিলাম।

 এ দ্বীপবাসীরা সকলেই খর্ব্বাকৃতি ও কৃশকায় এবং তাহারা যে ধরণে পোষাক করিয়াছে, তাহা দেখিলে কোন মতেই হাস্য সম্বরণ করা যায় না। আমাদের দেশের নাচের কাঠের পুতুলের কথা মনে পড়িয়া গেল। মেয়েদের গড়ন যেন অবিকল সেই ছাঁচের, কেবল পরণের ঘাগরার ঘেরটা তদপেক্ষা চতুর্গুণ। পুরুষদের পরিচ্ছদ অনেকটা কাবুলিওয়ালাদের মত, কেবল মাথায় পাগড়ীর বদলে কাল চতুষ্কোণ টুপী। ইহাদের সকলেরই পদদ্বয়ে কাষ্ঠনির্ম্মিত পাদুকা, নচেৎ চলাফেরা চলে না; কেন না বৎসরের বেশীর ভাগই এই স্থলভূমিটুকুতে বারিধারা বর্ষিত হয়, বাকি সময়, রাস্তাঘাট বরফে ঢাকা থাকে। বস্তুতঃ, এমন জায়গায়ও কি মানুষ সাধ করিয়া বাস করিতে আসে? পর্য্যটকের পক্ষে এ দৃশ্য সাময়িক আনন্দদায়ক হইতে পারে বটে, কিন্তু আজীবন এ কষ্টভোগের কি রহস্য থাকিতে পারে, সহসা বুঝিতে পারিলাম না।