পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

জ্ঞানতৃষ্ণা অবস্থানুসারে প্রচলিত সুগম পথে তৃপ্তিসুখগামিনী হইতে না পারিয়া বেগবতী স্রোতস্বতীরই মত আপনই আপনার পথ করিয়া লইল, এবং আপনার সম্পূর্ণ উপযোগী পথে প্রবাহিত হইতে লাগিল।

 সতীশচন্দ্র অল্প দিনের মধ্যেই জমীজমার সুব্যবস্থা করিল; কৃষিবিজ্ঞানের অনুমোদিত কৃষিকার্য্যের পরীক্ষায় সফলশ্রম হইয়া আপনার আয় বাড়াইতে সক্ষম হইল। অবস্থা ফিরিল। সতীশচন্দ্রের পরোপকারসাধনের যথেষ্ট সুযোগ ছিল; সে তাহার সদ্ব্যবহার করিতে জানিত। যাহাতে গ্রামের স্বাস্থ্যোন্নতি হয়, গ্রামবাসীরা রোগে ঔষধ পায়, ইচ্ছুকদিগের পক্ষে দারিদ্র্যদোষে শিক্ষালাভ অসম্ভব না হয়, সে সে সকল বিষয়ে সচেষ্ট হইত। তাহার সময় জ্ঞানার্জ্জনে, অবস্থার উন্নতিসাধনে ও পরোপকারচেষ্টায় বায়িত হইত। গ্রামের দুঃখী, দরিদ্র, কৃষক ও শ্রমজীবী সকলে তাহাকে যেমন ভালবাসিত, তেমনই শ্রদ্ধা করিত। সতীশের স্নেহশীলা জননী তাহার পরোপকারসাধনব্রতে তাহাকে সর্ব্বদা উৎসাহিত করিতেন। তিনি কাহারও নয়নে অশ্রু দেখিতে পারিতেন না। কাহারও আহার হয় নাই শুনিলে, তিনি আপনার অন্ন তাহাকে দিয়া উপবাস করিতে চাহিতেন। পল্লীর দুঃখিনীরা তাঁহাকে দেবী জ্ঞান করিত। তাঁহার দয়ায় অনেকের দিনপাতের সুবিধা হইত; বেদনাকাতর হইলে তাহারা তাঁহাকে কষ্ট জানাইয়া সান্ত্বনালাভ করিত। এই পরিবারে কমলের আদরের অন্ত ছিল না, সুখের সীমা ছিল

২৮