পাতা:নানা-কথা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३8७ 5-९ ।। করিতে পারি না। যে ভাব জীবনসংগ্রামে আমাদের হাতে অস্ত্র হওয়া উচিত, তাহাকে হয় তা আমরা ভূষণস্বরূপে দেহে ধারণ করি। এবং যাহা ভুষ মাত্র, তাহারও আমরা অযথা ব্যবহার করি। ইউরোপের পায়ের মল, গলার হারস্বরূপে বঙ্গ-সরস্বতীকে কণ্ঠস্থ করিতে দেখা গিয়াছে। পরীক্ষাব্যতীত কোন বস্তুরই সম্যক পরিচয় পাওয়া যায় না । কিন্তু কোন বস্তুকেই পরীক্ষা করিবার প্রবৃত্তি আমাদের নাই। ইহাও আমাদের শিক্ষায় দোষে। দিব্যাবদানে দেখিতে পাই যে, বৌদ্ধ যুগে জম্বুদ্বীপে কুলপুত্রদিগকে অষ্টবিধ বস্তু পরীক্ষা করিবার শিক্ষা দেওয়া হইত। কিন্তু এ যুগে স্কুলকলেজে আমরাই পরীক্ষিত হই, কিছুই পরীক্ষা করিতে শিখি না। আমরা যদি রত্ন পরীক্ষা করিতে শিখিতাম তাহা হইলে আমরা সাহিত্যে কাচকে মণি এবং মণিকে কাচ বলিতে ইতস্তত করিতাম। আমাদের পক্ষে পরীক্ষা-বিদ্যা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। আমরা নানা দেশের নানা যুগের নানা শাস্ত্ৰ পড়ি অথচ দেশী বিদেশী নানা মুনির নানা মতের মধ্যে কোনটি গ্রাহ এবং কোনটি অগ্রাহ, তাহ স্থির করিতে পারি না। আমরা বৰ্ত্তমান ইউরোপ এবং প্রাচীন ভারতবর্ষ উভয়কেই সম্বোধন করিয়া বলি,-“ব্যামিশ্রেণ বাক্যেন মোহয়সি, মাম”। এ অবস্থায় সকল বিষয়েরই যে দুটি দিক আছে, এইমাত্র আমরা জানি কিন্তু কোনটি যে তার দক্ষিণ আর কোনটি যে বাম, সে জ্ঞান আমাদের নাই। মাসেরও যে দুটি পক্ষ আছে, এই জ্ঞান আমরা পঞ্জিকা হইতেও সংগ্ৰহ করিতে পারি। কিন্তু তাহার কোনটি কৃষ্ণ এবং কোনটি শুক্ল তাহা । জানিবার জন্য চোখ খুলিয়া দেখা আবশ্যক।