বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য

আরও ছোট-বড় কত রাজ্য হয়ত ইতিপূর্বে নষ্ট হইয়া গিয়াছে, ইতিহাস সে-কাহিনী লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে নাই। এখানে এতবড় প্রয়োজন নারীতে কি ছিল যে, সাম্রাজ্য ভাসাইয়া দিতেও মানুষ পরাঙ্মুখ হয় নাই, প্রাণ দিতেও দ্বিধা করে নাই। তোমার শ্লেটখানিতে জায়গা কত যে, ইহার দাম তুমি কষিয়া বাহির করিয়া দিবে? কথাটা বাহিরের দিক হইতে অস্বীকার করি না, কিন্তু ভিতরের দিকে চাহিয়া আমি যদি প্রশ্ন করি, মানুষ রাজ্যের দিকে চাহিয়া দেখে নাই সত্য, কিন্তু তাহা কতটা যে নারীর দিকে চাহিয়া, আর কতটা যে নিজের অসংযত উচ্ছৃঙ্খল প্রবৃত্তির দিকে চাহিয়া—সে জবাব আমাকে কে দিবে?

 নারীত্বের মূল্য কি? অর্থাৎ, কি পরিমাণে তিনি সেবাপরায়ণা, স্নেহশীলা, সতী এবং দুঃখে-কষ্টে মৌনা। অর্থাৎ, তাঁঁহাকে লইয়া কি পরিমাণে মানুষের সুখ ও সুবিধা ঘটিবে, এবং কি পরিমাণে তিনি রূপসী। অর্থাৎ, পুরুষের লালসা ও প্রবৃত্তিকে কতটা পরিমাণে তিনি নিবদ্ধ ও তৃপ্ত রাখিতে পারিবেন। দাম কষিবার এ ছাড়া যে আর কোন পথ নাই, সে কথা আমি পৃথিবীর ইতিহাস খুলিয়া প্রমাণ করিয়া দিতে পারি।

 ইয়োরোপ এ-দেশীয়কে চোখ রাঙাইয়া বলে, “তোমরা নারীর মূল্য জানো না, মর্যাদা বোঝ না, আমোদ-আহলাদে তাহাকে যোগ দিতে দাও না, ঘরের কোণে আবদ্ধ করিয়া রাখো —তোমরা বর্বর।” মনু প্রভূতি হইতে পূজার্হা’ ইত্যাদি শ্লোক তুলিয়া পাল্টা জবাব দিয়া আমরা বলি, “না, আমরা মা-বোনের মুখে রঙমাখাইয়া, শ্যাম্পেন-ক্লারেট পান করাইয়া উত্তেজিত করিয়া সভা-সমিতিতে নাচাইয়া লইয়া ফিরি না —আমরা ঘরের কোণে পূজা করি। তোমাদের ঐ বল-ডান্সের পোষাক দেখিয়া লজ্জায় অধোবদন হই,নাচ দেখিয়া চোখ বুজি। আমরা বরং বর্বর হইয়া চিরদিন মা-বোনকে ঘরের কোণে বদ্ধ করিয়া রাখিব, কিন্তু তাঁঁহাদের মর্যাদা বাড়াইবার জন্য প্রকাশ্যে ভিড়ের মধ্যে নাচাইতে পারিব না।” সাহেবেরা অবশ্য এ তিরস্কার গ্রাহ্য করে না। প্রসিদ্ধ আচার্য Prof.