পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নির্বাসিতের আত্মকথা সাধুদের দলে একটী ১০৷১২ বৎসরের আর একটি ১৫/১৬ বৎসরের, বাচ্ছ সাধু দেখিলাম। আমাদের দেশের সৌখিন ছেলেরা যেমন কামাইয়া গোফ তোলে, ইহারাও তেমনি চাচার কেশে আটা লাগাইয়া জটা বানায় । সংসারটা যে মরীচিকা, তা, ইহার এত অল্প বয়সে কি করিয়া আবিষ্কার করিয়া ফেলিল, জানিবার জন্য আমার বড় কৌতুহল হইল। শেষে জানিলাম যে ইহারা গরীবের ছেলে, সাধু হইলে পেট ভরিয়া খাইতে পাইবে বলিয়া ইহাদের মা বাপ ইহাদের সাধুর দলে ভৰ্ত্তি করিয়া দিয়াছে । সাধুরা ভোর বেলা উঠিয়া স্নান করে ; অর্থাৎ মাথা ছাড়া আর সৰ্ব্বাঙ্গা ধুইয়া ফেলে। ১০৷১২ দিন অন্তর জটা এলাইয়া এক এক বার মাথা ধুইবার পালা আসে। মেয়েদের খোপা বঁধার চেয়ে ইতাদের জটাবাধা আরও জটিল ব্যাপার। পাকের পর পাক রাখিয়া চুলের গুছি দিয়া অ্যাটিয়া কেমন করিয়া সাজাইলে জটাগুলি বেশ চূড়ার মত মানানসই দেখায়, তাহা ঠিক করা একটা দস্তুর মত ললিত শিল্পকলা । সকালবেলা স্নানের পর ধূনি জালিয়া সকলে গায়ে ছাই মাখিতে লাগিয়া যান ; সঙ্গে সঙ্গে স্তোত্রপাঠ ও চলে। বেলা আটটা নয়টার সময় ‘কড়াপ্ৰসাদের’ বন্দোবস্ত । সত্যপীরের সিন্নি হইতে আরম্ভ করিয়া মা কালীর প্ৰসাদ পৰ্যন্ত এ বয়সে অনেক রকম প্ৰসাদই খাইয়াছি। কিন্তু এই কড়াপ্ৰসাদের তুলনা নাই। এটা আমাদের হালুয়ার পাঞ্জাবী সংস্করণ। অনিত্যসংসারে এই ভগবৎ “প্ৰসাদই যে সারা বস্তু তাহ খাইতে না খাইতেই বুঝিতে পারা যায় ; এবং সঙ্গে সঙ্গে ভক্তি-রসে মনটা ভিজিয়া উদাস হুইয়া আসে। মধ্যাহ্নে তোফা মোটা মোটা নরম নরম ঘূতসিক্ত পাঞ্জাবী রুটি ও দাল—এবং রাত্রিকালেও তদ্বৎ । দেখিতে দেখিতে চেহারাটা । বেশ একটু লালাভ কইয়া উঠিল, আর মাঝে মাঝে মনে হইতে লাগিল যে মাণিকতলার বাগানে পোড়া খিচুড়ীর মধ্যে আর ফিরিয়া গিয়া