পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ ܘܓ কাজ নাই। এই সাধুদের মধ্যেই জটাজুট রাখিয়া বৈরাগ্য-সাধনার লাগিয়া যাই! কিন্তু কপাল যাহার মন্দ, তাহার এত সুখ সহিবে কেন ? নেপালে ‘ধুনি সাহেব' নামে উদাসী সম্প্রদায়ের এক তীর্থস্থান আছে। সাধুরা সেইখানে তীর্থ দৰ্শন করিতে যাইতেছিলেন। আমরা স্থির করিলাম। তাহদের সহিত রওনা হইব । কিন্তু আমাদের শ্ৰীঅঙ্গে তখন এক একটা গেরুয়া আলখেল্লা অ্যাটা ; এবং উদাসী সম্প্রদায়ের ঐ গেরুয়াটা সম্বন্ধে বিষম আপত্তি। গেরুয়া পরা সাধুদের উপর তাহদের বেশ একটু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আছে। র্তাহারা নিজেদের ছাই-মাখা অবধূত-মার্গকেই শ্ৰেষ্ঠ মনে করেন। সে কথাটা আমাদের জানা ছিল না ; তাহা হইলে গেরুয়া না পরিয়া খানিকটা ছাই মাখিয়াই বসিয়া থাকিতাম। কিন্তু এখন উপায় ? একজন প্ৰবীণ সাধু এই দুরূহ সমস্যার সীমাংসা করিয়া বলিলেন যে আমরা যদি তাঁহাদের নিকট দীক্ষা লইয়া উদাসীদের সেবকরূপে গণ্য হই, তাহা হইলে গেরুয়ার সঙ্গে একটা রফা করা যাইতে পারে। আমরা ভক্তিগদগদকণ্ঠে তাহাই করিতে স্বীকৃত হইলাম। আমাদের দীক্ষা দিবার আয়োজন হইল। একজন সাধু একটা বড় বাটীতে একবাটী চিনি গুলিয়া লইয়া আসিলেন। যিনি মঠাধ্যক্ষ তিনি ঐ চিনি গোলায় আপনার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ডুবাইয়া আমাদের তাহা খাইতে দিলেন। আমরা চোঁ টাে করিয়া তাহ খাইয়া ফেলিবার পর বৃদ্ধ আমাদের “এক ওঙ্কার সৎনাম কৰ্ত্তাপুরুষ” প্রভৃতি মন্ত্রপাঠ করাইয়া আমাদের পিঠে এক একটা চড় মারিয়া বলিয়া দিলেন যে আজ হইতে আমরা উদাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। দীক্ষা কাৰ্য্য সুসম্পন্ন হওয়ায় আমাদের গেরুয়ার দোষ খণ্ডিত হইল। আমরাও ভক্তি, বিস্ময় ও পুলক ভরে আমাদের নূতন গুরুজীর পদধূলি মাথায় লইলা কড়া-প্ৰসাদের অনুসন্ধানে বাহির হইয়া পড়িলাম। তীর্থদর্শনে যাত্ৰা করিলাম আমরা ৫৭ জন বাঙ্গালী, আর ঐ ৩০ ॥৩৫